গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খেলে কি হয়? - নিম পাতার বৈশিষ্ট্য সমাধান
আপনি কি নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক কিন্তু কোন জায়গায় সঠিক উত্তর পাচ্ছেন না। আসুন আজকে এই আর্টিকেল থেকে গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খেলে কি হয় এবং নিম পাতার বৈশিষ্ট্য সমাধান সম্পর্কে খুব সহজে জানতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআজকের বিষয়ে আলোচনা থেকে আপনি জানতে পারবেন নিম পাতার সকল বৈশিষ্ট্য এবং তার সমাধান এবং নিমপাতা খেলে কি প্রতিক্রিয়া হয় নিম্বাতে কি কি ভিটামিন থাকে ইত্যাদি বিষয়ে আজকে জানতে পারবেন।
ভূমিকা
নিম গাছের পাতা, ডাল, সাল সবগুলোতে রয়েছে ওষুধি গুণ। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে নিমপাতা সেবন করেন অনেক উপকার পাবেন। এটি ওজন কমানো থেকে শুরু করে ডায়াবেটিক্স ভালো করে থাকে। নিম পাতার যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে।
নিম পাতার বৈশিষ্ট্য
নিম গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল Azadirachta। নিম পাতায় প্লাইবোনয়েটস এছাড়াও এতে এজাডিরেক্টিং গুটানিক এসিড, ট্রিটার পিনয়েটস, ড্রাইকোসাইট পাওয়া যায়।
- ক্যান্সার নিরাময় করে।
- রক্তে চিনির পরিমাণ কমায়।
- রক্ত পরিষ্কার রাখে।
- জন্ডিসের সমস্যা ভালো করে।
- ভাইরাস প্রতিরোধ করে।
- এলার্জির সমস্যা দূর করে।
- বাতের ব্যথা দূর করে।
- কৃমিনাশক সমস্যা দূর করে।
- লিভারের সমস্যা দূর করে।
- চুলের সমস্যা দূর করে।
- হাঁপানের সমস্যা দূর করে।
- মুখের জীবাণু ধ্বংস করে।
- ক্যান্সারের জন্য নিম পাতা অনেক উপকারী এতে রয়েছে পলিসেকারাইটস এবং নিউমনোরেটস নামক দুটি উপাদান যা আমাদের টিউমার ও ক্যান্সারের কোষ কে ধ্বংস করতে সাহায্য করে থাকে।
- রক্তের চিনির পরিমাণ কমায়, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিম পাতা হল একটি উপকারী ঔষধ। নিম পাতা খাবার জন্য রক্তের চিনির পরিমাণ কমে যায় যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা এটি ব্যবহারের মাধ্যমে সুস্থ থাকে।
- নিম পাতা আমাদের শরীর রক্তে পরিষ্কার রাখে। নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংনাল উপাদান রক্তকে পরিষ্কার রাখে। এবং রক্তনালীতে জমে থাকা টক্সিন ও খারাপ কলেস্টরলকে কমেডি আপনার হার্ডকে ভালো রাখে।
- জন্ডিসের সমস্যা রক্তের বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে জন্ডিস হয়। সেজন্য এই সময়তে তিতো খাবার খাওয়া আমাদের জন্য প্রয়োজন। তাই এ সময় আমাদের শরীরের জন্য নিমপাতা অনেক কাজ করে।
- আমাদের দেব ভাইরাস প্রতিরোধ করে। নিমপাতা বিভিন্ন ভাইরাসের সাথে লড়াই করে থাকে। এছাড়াও এটি বসন্ত হাম ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রেও নিম পাতা ওষুধ হিসেবে ভালো কাজ করে।
- এলার্জির সমস্যা, আমাদের শরীরের যদি এলার্জির সমস্যা হয়ে থাকে অবশ্য নিমপাতা দিয়ে গোসল করতে হবে। এছাড়াও আপনারা নিমপাতা বেটে শরীরে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
- বাতের ব্যথা হলে, বর্তমানে বাজারে নিম পাতার তেল পাওয়া যায়, জাবাতের ব্যথায় আমরা অনেকে মালিশ করে থাকি। এছাড়াও আপনি নিমপাতা বেটে সরিষার সাথে গুলি আপনি সেই স্থানে মালিশ করলে আপনার বাতের ব্যথার ভালো হয়ে যাবে।
- আমাদের ছোট বড় সকলের কৃমির সমস্যা হয়ে থাকে, তাই নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে আপনি কৃমির সমস্যা দূর হবে।
- লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী হল নিম। কারণ লিভার কার্সিনো জেনেসিস প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব ফেলে থাকে ফলে লিভারের সমস্যা নিয়ে অনেক ভালো কাজ করে।
- আমাদের চুলের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে, নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া উপাদান চুলের বিভিন্ন সমস্যায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম পাতার মধ্যে যে ব্যাকটেরি নামক একটি গুন আছে। তার কারনে আমাদের চুলে যে খুশকি এবং উকুন হয়ে থাকে সে সমস্যা দূর করে।
- হাঁপানের সমস্যা, আপনাদের যাদের হাঁপানের সমস্যা রয়েছে অবশ্যই আপনারা এই নিম পাতা খান। নিম পাতা হাঁপানি সমস্যার অনেক ভালো একটি ঔষধ। আপনার সমস্যার কারণে নিম পাতা খেলে আপনার অনেক উপকার হবে।
- যেহেতু নেম জীবাণু নাশক তাই যদি আপনি নিম পাতার পিষে নিয়মিত মুখে মাখেন তাহলে আপনি অনেক উপকার পাবেন। তবে মনে রাখতে হবে যাদের স্ক্রীন সেন্সেটিভ তাদেরকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই ব্যবহার করতে হবে।
নিম পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
দেখুন গাছ-গাছলা এগুলো হলো সরাসরি ঔষধ। তার জন্য এটি সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে না হলে আপনার অনেক ক্ষতি হতে পারে। এবং আমরা ভালো করতে গিয়ে আরো অনেক খারাপ করে ফেলতে পারি সেজন্য আমাদেরকে নিয়ম মেইনটেন করেই নিম পাতা সেবন করতে হবে।
- আমাদের আশেপাশে যে সকল বয়স্ক লোক রয়েছে এদের এক মাসের বেশি যদি নিম পাতা সেবন করে তাহলে অবশ্যই কিডনি ও লিভারে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে।
- অবশ্য মনে রাখতে হবে যে শিশুদের নিম পাতার বীজ বা তেল গ্রহণ করলে এক ঘন্টার ভিতরে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। যেমন-হৃদরোগ, বমি, ডায়রিয়া, ডিসঅর্ডার ইত্যাদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলার বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
- যে সমস্ত বাচ্চারা এখনো মায়ের দুধ খাচ্ছে সে সকল মায়েদের নিম পাতা কম খেতে হবে।
- গর্ভবতী মহিলা যদি এক মাসে বেশি সময় নিম সেবন করে তাহলে তার গর্ভস্রাব হতে পারে।
- যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা বা যারা এমনি নিম খেয়ে থাকেন, অবশ্যই অতিরিক্ত নিম খাবেন না আপনার সুগার কমে যেতে পারে। তাই আপনি চাইলে সুগারের পরীক্ষা করে নিম সেবন করতে পারেন।
- নিম পাতা বাচ্চাদের জন্য স্বাভাবিক বৃদ্ধি বা ফার্টিলিটি কমিয়ে দিতে পারে।ৎ
- আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও যে কোন অপারেশনের ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহ আগে থেকে নিম গ্রহণ করা যাবে না।
- আশা করি প্রতিক্রিয়া জেনে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। এগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন ইনশাল্লাহ ভালো ফলাফল পাবেন।
নিম পাতায় কি ভিটামিন আছে?
নিম পাতায় যেগুলো রয়েছে
- প্রোটিন
- কার্বোহাইড্রেট
- ক্যালসিয়াম
- ফসফরাস
- ভিটামিন সি
- এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইটো এসিড পাওয়া যায়
তাই ভারত বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, যে নিম ৪০টি জটিল ও সাধারণ রোগ নিরাময় করতে পারে।
নিম পাতার ব্যবহার
- এক কেজি পরিমাণে নিমপাতা ভালো করে রোদ্রের শুকিয়ে নিন, এ শুকনো নিম পাতা যেকোনো কিছুতে গুলি করে নেন। এবং এই গুরু করা পাতা একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পাত্রে ভরে রাখুন।
- এবার আমাদেরকে চা চামচের তিনভাগের এক ভাগ নিম পাতার গুঁড়া এক চা চামচ ইসুবমুলের ভুষি সহ এক গ্লাস পানিতে আধা ঘন্টা ধরে ভিজে রাখুন। এবং আধা ঘন্টা পরে ভালোভাবে চামচ দিয়ে মিশিয়ে নেবেন।
- এই নিমপাতা এবং ইসুবমুলের ভুষি মেশানো পানিটা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একবার, এবং দুপুরে ভরা পেটে একবার, এবং রাতে সবার আগে একবার করে খেতে হবে।
আরে এটা খেতে হবে টানা 21 দিন। এবং কার্যকারিতা শুরু হতে প্রায় একমাস লেগে যায়। এরপর থেকে আপনার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা আর হবে না। কিন্তু এ সকল ব্যাপারে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনেই ব্যবহার করবেন। তাছাড়া আপনার শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খেলে কি হয়?
গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া খুবই ভয়ানক একটি কাজ। আমরা ছোটবেলা থেকেই অনেক নিম পাতা খেয়ে এসেছি কিন্তু আমরা জানিনা যে নিম পাতা খেলে শুধু উপকারী হয় না উপকারের সাথে অপকারটাও রয়েছে।
নিম খাওয়া অনেক উপকারিতা থাকলেও কিন্তু গর্ভাবস্থায় আপনাকে নিম খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ এটি শরীরে প্রবেশ করে শুক্রানো কে প্রত্যাখ্যান করে এবং কখন আবার গর্ভবতী ভ্রুন কেউ নষ্ট করে ফেলে।
আপনি যদি এই গর্ভ অবস্থায় নিম পাতা সেবন করেন তাহলে আপনার সাথে আপনার সন্তানেরও অনেক ক্ষতি হবে। এবং আপনার হঠাৎ করে ব্লিডিং শুরু হতে পারে।
অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে কি হয়?
- নিমপাতে একদম শক্তিশালী এবং ওর সাথে গুণাবলী একটি পাতা। যেটা আপনি সঠিক নিয়মে না খেলে উপকারে বদলে আপনার অনেক ভয়ঙ্কর ক্ষতি ঘটাতে সক্ষম।
- অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে লিভারে অরিনিধন চক্র এবং রেচনের কাজ ব্যাহত হয় যার ফলে শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন গুলো বের হতে পারে না। এবং ব্ল্যাকথিমিং ট্যাবলেট খাওয়াকালীন নিম পাতার ব্যবহার সম্পন্ন নিষেধ।
- পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের কখনো নিম পাতা দেওয়া উচিত নয়। এ সময় শিশুর দের নিম পাতা খাওয়ালে বমি বমি ভাব, শারীরিক দুর্বলতা, মস্তিষ্কের ব্যাধি এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড চলাকালীন নিম পাতা খাওয়া অবশ্যই উচিত না। কারণ নিমপাতা একটি ব্ল্যাক থিমিং এজেন্ট রূপে কাজ করে পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং ঘটাতে পারে।
- সন্তানের নিতে ইচ্ছুক নারী এবং পুরুষদের অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়া উচিত নয়। কারণ নিমপাতা একটি নন প্রেগনেন্সি ট্যাবলেট এর মত জন্মনিরোধক রূপে উপাদান হিসেবে কাজ করে। পুরুষদের টেস্টোস্টেরন এবং নারী দেহের প্রজেস্টরন হরমোন এর কার্যকারিতা ব্যাঘাত ঘটায়। যার ফলে পুরুষদের বীর্যে শুক্রানু সংখ্যা এভাবে কমে যেতে পারে এবং নারে সন্তান ধরনের ক্ষমতা চিরতরের মতো বিলুপ হয়ে যেতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় যদি নিমপাতা সেবন করেন তাহলে শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। অসময়ে হঠাৎ প্রসব বেদনা হলে ব্লিডিং হতে পারে। এবং গর্ভপাত করতে পারে।
- নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস আপনার কিডনির গঠনগত এবং কার্যকরগত নেফ্রনের চরম ক্ষতি করে কিডনি ফেলিওর ঘটাতে পারে।
এই আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন যে কিভাবে আপনাকে কতটুকু নিম পাতা সেবন করতে হবে আর নিম পাতা বেশি সেবন করলে কি ক্ষতি হয়। আরো অনেক রকম সমস্যা হতে পারে তাই আপনি অবশ্যই নিয়ম মেনে সেবন করবে।
নিম পাতা আর হলুদ মুখে দিলে কি হয়?
- নিম পাতা ও হলুদ যদি আপনি মুখে দেন তাহলে আপনার মুখে ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করবে।ৎ
- ত্বকের রং এবং উজ্জ্বল ও ফর্সা রাখতে সাহায্য করে।
- এটি আপনার ত্বকের বলিরেখা দূর করে এবং বার্ধক্য জনিত নানান সমস্যা প্রতিরোধ করে
আমাদের অনেকেরই যে সমস্যা নিয়ে পড়ে থাকে সেটা হলো মুখে ব্রণ। ঠিক করার জন্য আমরা বিভিন্ন কসমেটিকস মেখে থাকি। যার ফলে ব্রণ ভালো হওয়ার থেকে আরও ব্রণ বৃদ্ধি পায়। নিম পাতা এবং হলুদ আমাদের এই ব্রণ কে প্রাকৃতিকভাবে ভালো করতে সাহায্য করে। তার ফলে আপনার মুখে আর কোন সমস্যা থাকবে না।
আপনি এই নিম পাতা এবং হলুদের মিশ্রণ কিভাবে করবেনঃ আপনাকে প্রথমে নিমপাতা শুকিয়ে নিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে, এবং একইভাবে হলুদটাও গুঁড়ো করে নিতে হবে। এ নিম পাতা এবং হলুদের মিশ্রনের সময় যে পানিটুকু নেন অবশ্য সে পানির পরিবর্তে আপনি লেবু রস নিতে পারেন।
মিশ্রণটি আপনি যখন স্বপন দিতে পারবেন কিন্তু আমার মতে যদি আপনি রাত্রে মুখে দিয়ে শুয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জন্য অনেক উপকার হবে।
নিম পাতা কোথায় পাওয়া যায়
নিমপাতা আপনি বিভিন্ন এলাকায় পেতে পারেন কারণ বিভিন্ন এলাকায় নিম গাছের চাষ করে থাকে। এবং যদি আপনি শহরে থেকে থাকেন তাহলে অবশ্যই অনলাইন মাধ্যমে আপনি নিম পাতা সংগ্রহ করতে পারবেন। আপনার যদি চেনা জানা এলাকায় কেউ থেকে থাকে অবশ্যই তার মাধ্যমে আপনি নিমপাতা নেবেন।
লেখকের মন্তব্য
আজকের আলোচনা থেকে অবশ্যই আপনি নিম পাতার সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। নিমপাতা খেলে উপকার এবং অপকার দুটো জানতে পেরেছেন। এই ওয়েবসাইটি আপনারা বিভিন্ন অজানা কিছু জানতে পারবেন এবং বিশেষজ্ঞ মতে সকল কিছু সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url