মৌসম ভিত্তিক বেশি বজ্রপাত প্রবন এলাকা গুলো - বজ্রপাতের প্রতিকার
বজ্রপাত সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক কিন্তু কোথাও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না? আপনি সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন, আসুন আজকে এই আর্টিকেল থেকে আপনি মৌসম ভিত্তিক বেশি বজ্রপাত প্রবন এলাকা গুলো - বজ্রপাতের প্রতিকার সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পারবো।
পোস্ট সূচিপত্রঃআজকে আর্টিকেল থেকে আমরা যে সকল তথ্য জানতে পারবো সেগুলো হল, মৌসুম ভিত্তিক বজ্রপাত প্রবন এলাকাগুলো, ভদ্রবাদ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বজ্রপাত কেন হয়, ইত্যাদি।
ভূমিকা
বজ্রপাত হলো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বজ্রপাতে আমাদের দেশে দিন দিন অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এবং এই মৃত্যু ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া বৃদ্ধের মতে বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চল গুলোতে বজ্রপাতের প্রভাব অনেক বেশি।
আজকে বজ্রপাত বিষয়ে আমরা সকল কিছু জানবো এবং সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় হলো বজ্রপাতের প্রতিকার ও বজ্রপাত হলে আমাদের কি করতে হবে। আশা করি আপনি আমাদের সাথেই থাকবেন।
বাংলাদেশে বজ্রপাতের মৃত্যু
- ২০১৬ - ৩৫০
- ২০১৭ - ৩০২
- ২০১৮ - ২৭৭
- ২০১৯ - ২৩০
- ২০২০ - ৩৮০
মৌসম ভিত্তিক বেশি বজ্রপাত প্রবন এলাকা গুলো
- বর্ষার পূর্ব সময়ঃ মার্চ থেকে মে এই সময়ের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ সহ সিলেট বিভাগে।
- বর্ষাকালেঃ এই সময় বজ্রপাত হওয়ার সময় বেশি থাকে, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বরিশাল, রংপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরে।
- বর্ষা পরবর্তী সময়ঃ অক্টোবর ও নভেম্বর এ সময় বজ্রপাত হবার সম্ভাবনা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজারে।
- শীতকালেঃ এ সময় বজ্রপাত হয়, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটম খুলনা, পটুয়াখালী।
বজ্রপাত কখন হয়?
- প্রি মনসুমে বর্জ্যপাত হয় রাত আটটা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত। এ সময় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় বাংলাদেশে।
- মনসুমে বজ্রপাত হয় মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত এটা পৃথিবীর কোথাও হয়না শুধুমাত্র বাংলাদেশে হয়।
- পোষ মনসুমে বজ্রপাত হয় বিকেলবেলা বা সন্ধ্যার পরে হয় যদি সাইক্লোন বেশি হয়।
- আবার শীতকালেও দুপুরের দিকে এবং রাতের দিকে বজ্রপাত হয়ে থাকে।
বজ্রপাত কেন হয়
বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন এবং গ্রামের বড় গাছের সংখ্যা কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন আবহাওয়াবিদরা। বড় গাছের অভাব বজ্রপাতে মৃত্যুর একটা কারণ হতে পারে।
শহরাঞ্চলের ঘরবাড়ি বেশি হলেও সেখানে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা থাকায় বজরা হাতে হঠাৎ এর ঘটনা কম। কিন্তু গ্রামে এই নিরোধক হিসেবে কাজ করত যে বড় বড় গাছ, তার সংক্রান্ত তিনদিন কমে যাচ্ছে বলে গ্রাম অঞ্চলে বজ্রাঘাতে প্রাণহীন বেশি ঘটতে দেখা যায়।
বজ্রপাত হলে কি করতে হবে
- দালান বা পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নিনঃ ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোন অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থান থাকা যাবে না, সবচেয়ে ভালো হয় কোন একটি পাকা দালানের নিচে আচরণ নিতে পারলে।
- উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকুনঃ কোন স্থানে যদি বজ্রপাত হয় তাহলে সেটি উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটির ওপরে বজ্রপাত পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেজন্য এইসব জায়গা থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। খোলা স্থান একটি যাত্রী ছাউনি তালগাছ বা বড় গাছ বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে।
- ধাতব বস্তু স্পর্শ করবেন নাঃ বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়িতে ধাতব কল, সিঁড়ির রোলিং, লোহার পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনে স্পর্শ করবেন না।
- বৈদ্যুতিক চালিত যন্ত্র থেকে সাবধানঃ বজ্রপাতের সময় আপনাকে অবশ্যই যে সকল লোহা জাতীয় যন্ত্রপাতি এবং আপনার ঘরে ইলেকট্রিক জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে। এবং অপ্রয়োজনীয় কোন কিছু থাকলে সেটি বৈদ্যুতিক ডিভাইস থেকে খুলে রাখতে হবে।
- খোলা ও উঁচু জায়গা থেকে সাবধানঃ এমন কোন জায়গায় যাওয়া যাবে না, যে জায়গায় টি উঁচু। বজ্রপাতের সময় যদি আপনি কোন ফসল জমিতে বা বড় মাঠে থাকেন তাহলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যান। যদি কোন উঁচু জায়গায় থাকেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি নেমে পড়ুন। বজ্রপাত হবে এমন সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুন এবং চোখ বন্ধ রাখুন কিন্তু মাটিতে শুয়ে পড়বেন না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
- পানি থেকে সরুনঃ বজ্রপাত হওয়ার সময় আপনি যদি করে গোসল করেন বা পানি আছে এমন স্থানে থাকেন তাহলে অবশ্যই সেখান থেকে দ্রুত সরে পড়তে হবে। এবং নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। কারণ পানি খুব দ্রুত বিদ্যুৎ পরিবাহী।
- পরস্পর দূরে থাকুনঃ বজ্রপাত হওয়ার সময় আপনারা যদি একসঙ্গে অনেক জন খোলা জায়গায় থাকেন, তাহলে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান। কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আশ্রয়ের ব্যবস্থা না। তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান। এবং জানালা থেকে দূরে থাকো।
- বাড়ি সুরক্ষিত করুনঃ আপনার বাড়িকে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। এজন্য আর তিন সংযুক্ত রড বাড়িতে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে ক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এর পরামর্শ নিতে হবে।
- রাবারের বুট পরুনঃ বজ্রপাত হওয়ার সময় আপনি যদি খালি পাইবা চামড়া জনিত কোন জিনিস পড়ে থাকলে এটি আপনার জন্য খুবই বিপদজনক। সেজন্য আপনাকে বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের দূতাবাস স্যান্ডেল সবচেয়ে নিরাপদ।
বজ্রপাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
ভূমি থেকে তিন মাইল দূরত্বে বজ্রপাত গরে 1 billion থেকে 10 billion শক্তি উৎপন্ন করে। একটি 100 ওয়াট বাল্ব জ্বালাতে শক্তি খরচ হয় 100 jul। সে হিসেবে 10 billion জুল শক্তি দিয়ে ওই বালকে 1160 day বা প্রায় 29 manth অবিরাম চালানো যাবে।
বৈদ্যুতিক শক্তির পরিমাপক এক kwh আওয়ার হিসাবে এই শক্তির 27 হাজার 840 kwh আওয়ার। বাংলাদেশ একটি পরিবারে গড়ে প্রতিমাসে প্রায় 100 থেকে 150 মিনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তার মানে একটি বজ্রপাতের বিদ্যুৎ জমা করতে পারলে একটি পরিবার 185 মাস বা 15 বছর বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে।
বজ্রপাত কিভাবে সৃষ্টি হয়
পানি চক্রে নিয়মে জলাধরে পানি বাষ্পভূত হয়ে মেগ আকারে আকাশে আশ্রয় নেই। এই মেঘ হলো বজ্রপাতের চার্জ। বজ্রপাতের কারণে মেঘ বৈদ্যুৎ চার্জের আধারের মতো ব্যবহার করে এবং এটি উপরের অংশ পজেটিভ (UPDRAFTS POSITIVE IONS) এবং নিচের অংশ নেগেটিভ (DOWNDRAFTS NEGATIVE IONS)।
যখন উপরের দিকে উঠতে থাকে তখন তারা মেঘের নিচের ঘনীভূত বৃষ্টি বাতাসার কোন সাথে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়। যার ফলে উপরের দিকে উঠতে থাকা অনেক বাস্তব কনা বেশ কিছু ইলেকট্রন হারায়।
এই মুক্ত ইলেকট্রন গুলো মেঘের তলদেশে জমা হয়। এবং ইলেকট্রন হারানোর পজেটি চার্জ জিত বাষ্প কনা মেঘের একেবারে উপরের পৃষ্ঠে চলে যায়। যার ফলে মেঘগুলো শক্তিশালী ধারক বা ক্যাপাসিটরের বৈশিষ্ট্য লাভ করে।
আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়
মেঘের দুই স্তরের চার্জ তারতম্যর কারণে, সেই স্থানে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র উৎপন্ন হয়। এই বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র উৎপন্ন শক্তি মেঘ সংগ্রহীত চার্জের পরিমাণের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। এভাবে বাষ্প কনা ও মেঘের সংঘর্ষে চলতে চলতে মেঘের উপরে এবং নিচে যথাক্রমে পজেটিভ ও নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে এতটা শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে।
যে তার বিকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থানরত ইলেকট্রন গুলো ভূপৃষ্ঠে আরো গভীরে চলে যায়। ফলাফল স্বরূপ ওই নির্দিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠ শক্তিশালী প্রজেটিভ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বজ্রপাতের প্রতিকার
- বজ্রপাত থেকে আপনার বাড়িতে সুরক্ষা করার জন্য বজ্রনিরোধক দন্ড স্থাপন করতে হবে। অবশ্যই ইঞ্জিনিয়ার এর পরামর্শ নিয়ে এটি স্থাপন করতে হবে।
- এবং বজ্রপাত থেকে রক্ষার জন্য তাল গাছ লাগান।
বজ্রপাত থেকে বাড়িঘর বাঁচানোর জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তার মধ্য অন্যতম হলো বজ্রনিরোধক দন্ড। অনাকাঙ্ক্ষিত বজ্রপাত থেকে বাড়িঘর বাঁচানোর জন্য বাড়ির ছাদের চেয়ে উচ্চতা করে ধাতুর দন্ডের সাহায্য মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত পুতে রাখা হয় এবং দন্ডকেই বজ্র নিরোধক বলে।
বজ্র নিরোধক দন্ড যেভাবে কাজ করেঃ সকলের একটি ধারণা রয়েছে যে বজ্র নিরোধক দন্ড বজ্রপাত আকর্ষণ করে। কিন্তু সেটি আসলেই সত্যটা নয় কারণ ভদ্র নিরোধক কোন কিছুই বিদ্যুৎ কে নিজের দিকে আনে না।
আরো পড়ুনঃ
এইটা থাকলে বা না থাকলেও বিদ্যুৎ যেখানে আঘাত করার কথা সেখানে আঘাত করবে। বজ্রনিরোধক দন্ডের কাজ হচ্ছে উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ কে সহজে নিরাপদে মাটিতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়া।
আপনি এটা যেভাবে তৈরি করতে পারেনঃ তামা, অ্যালুমিনিয়াম, প্রভৃতি ধাতুর বৈদ্যুতিক রোধের মাত্রা অনেক কম(অর্থাৎ সহজেই বিদ্যুৎ যাতায়াত করতে পার)। তাই সাধারণত এইসব ধাতু দিয়ে বজ্রনিরোধক দন্ড তৈরি করা হয়।
মোটামুটি ভাবে দুই সেন্টিমিটার ব্যাসের তামা বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ধাতব দন্ড ভবনের ওপর খারাপ ভাবে বসিয়ে দিতে হবে এবং এর মাথাগুলো সূচালো রাখতে হবে। আর সেটি এক ইঞ্চি বা কাছাকাছি ব্যাসের পরিবাহী তারের মধ্যে ভূমিকের সংযুক্ত রাখা হয়।
তাল গাছঃ বজ্রপাতের সময় তালগাছ আপনার জন্য একটি ভালো প্রোটেক্টর হিসেবে কাজ করে। তাল গাছের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দ্রুত মাটিতে চলে যায়। বিদ্যুতের ইলেকট্রিক ভোল্টেজ এবং ইলেকট্রিসিটি এটা আর্থিং হিসেবে নিচে চলে যায়।
লেখক এর মন্তব্য
বজ্রপাতের জন্য আমাদের দেশে অনেকেই মারা যাচ্ছে, অবশ্যই আমাদেরকে সতর্কভাবে চলাচল করতে হবে। ঘন মেঘ যখন হবে তখন আমাদেরকে অবশ্যই নিরাপদ স্থানে যাইতে হবে। অবশ্যই বজরবার ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদেরকে বেশি বেশি করে তাল গাছ লাগাতে হবে।
প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি এই আর্টিকেল থেকে বজ্রপাত সম্পর্কে সকল ধারনা পেয়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url