তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন? কিন্তু কোথাও সঠিক উত্তর পাচ্ছেন না? আসুন আজকে এই আর্টিকেল থেকে আপনি তুলসী পাতার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআজকে আজকে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবেঃ তুলসী পাতার বৈশিষ্ট্য, তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, তুলসী পাতার ব্যবহার, তুলসী পাতা খেলে কি কি রোগ হয়, তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম, তুলসী গাছের বৈশিষ্ট্য, শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম, খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা, তুলসী পাতা মুখে দিলে কি হয়, তুলসী পাতা এর উপকারিতা, ইত্যাদি।
ভূমিকা
তুলসী পাতা সম্পর্কে আপনি কমবেশি জানেন। তুলসী পাতা খেলে অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয় তুলসী পাতার রূপচর্চায়ও ব্যবহৃত হয়। আপনি জানেন কি এত উপকারী তুলসী পাতা খেলে কারো কারো মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তুলসি পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন অপকারিতা রয়েছে। আজকে এই আরটিকেল থেকে তুলসী পাতার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন”আশা করি আমাদের সাথেই থাকবেন”
তুলসী পাতার বৈশিষ্ট্য
আমরা জানি তুলসী পাতা এটি একটি ঔষধি বৃক্ষ। তুলসী পাতার যার অর্থ তুলনাহিনী। এটি একটি লামিয়াসি গোত্রের উদ্ভিদের অন্তর্গত। বৃক্ষটি যদিও শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট তবে এটি দুই থেকে তিন ফুট উঁচু হয় না। আর এটি 10 থেকে 12 টি স্তরে ফুল হয়ে থাকে। পাতা ও ফুল থেকে ধাঁজালো গন্ধ থাকে।বাংলাদেশের চার ধরনের তুলসী পাতা দেখা যায়। তার মধ্যে বাবই তুলস, রাম তুলসী, কৃষ্ণ তুলসী, সেতো তুলসী।
তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
উপকারিতাঃ তুলসী পাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী ঔষধ। তুলসী পাতার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তাই কয়েকটি উপকারিতার নিচে উল্লেখ করা হলো।
- তুলসী পাতায় রয়েছে এন্টি ইনফ্লিমেটরি রোগ প্রতিরোধ করার উপাদান যা সারা দিনের ক্লান্তি ও চাঁদ নিমেষ এর মধ্যে দূর করে
- তুলসী পাতা শরীরের কটিসল হরমোনের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে ও অতিরিক্ত উত্তেজনা চাপ থেকে মুক্তি দেয়।
- তুলসী পাতার দ্বারা শরীরের অন্তর নিহিত শক্তির জেগে ওঠে ও ধীরে ধীরে চাপ কমে আসে
- তুলসী পাতা দ্বারা সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টেরল প্রতিরোধ করা যায়। এর ফলে অতি সহজে আপনি ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এর সাথে কটিসল হরমোনের মাত্রা কমর ফলে মানসিক চাপ দূর হয়।
- নিয়মিত তুলসী খাবার ফলে অভিসিটি ও লিবিট প্রোফাইল খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- আমাদের চোখের যে সমস্যা চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়া, আন জনি, ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে তুলসী বেশ কার্যকর। তুলসীতে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান চোখের এই যাবতীয় সমস্যা খুব সহজে দূর করে।
- টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষদের জন্য তুলসী পাতা ইনসুলিন হরমোন উৎপাদনের কাজ করে।
- তুলসী পাতা একটি আন্টি ডাইবেটিক ওষুধের কাজ করে। তুলসী পাতার সাথে থাকা স্যাফন ও ফ্লাবনয়েড এগুলো ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে দারুন কার্যকরী।
- ঠান্ডা লেগে সর্দি ও কাশি হলে তুলসী পাতা একটি ওষুধের কাজ করে। বুকে কফ বসে গেলে সকালবেলায় একমাত্র জলে তুলসী পাতা আদা ভালো করে ফুটিয়ে এতে লেবু এবং মধু মিশিয়ে পান করুন
- সেরা গলা ব্যথা কমাতে তুলসীর জুড়ি মেলা ভার। তুলসী পাতা জলে ভিজে রোজ গারগেল করলে গলা ব্যথা কমে যায়।
- তুলসী পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে দারুন ভাবে কার্যকরী। তুলসী পাতায় রয়েছে রেডিও প্রটেকটিভ উপাদান জাতীয় মারে কোষগুলোকে নষ্ট করে। তুলসী পাতার থাকা হাইটেকনিক্যাল উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে।
অপকারিতাঃ তুলসী পাতা যতই উপকারই হোক না কেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি আমাদের শরীর অনেক ক্ষতি করে ফেলে। ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে তুলসী পাতা খাওয়া উচিত নয়।
- তুলসীর মূল উপাদান হলো ইউজিনাল। এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এর কারণে অত্যাধিক শ্বাসক্রিয়া, প্রসবের সঙ্গে রক্ত বা কফ হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় তুলসী সেবন, গর্ভবতী মহিলা এবং গর্ভস্থ ভ্রুনের জন্য নিরাপদ নয়। মেয়েদের রজচক্রের সময় তুলসী সেবন থেকে বিরত থাকা উচিত।
- তুলসী সেবনে রক্তের ঘনত্ব কমে যায়, তাই যারা রক্তের ঘনত্ব কমানোর ওষুধ খাচ্ছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি খাবারের উচিত নয়।
- তুলসীর অতিরিক্ত ব্যবহার পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
- ডাক্তারের চিকিৎসাধীন ডায়াবেটিক্স রোগীরা তুলসী সেবন করলে সুগারের মাত্রা বেশি কমে যেতে পারে এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- যেকোনো অপারেশনের আগে বা পরে তুলসী সেবন করা অতি ক্ষতিকারক কারণ এটি রক্তের ঘনত্বকে হালকা করে দিতে পারে।
- তুলসী গাছের প্রধান উপাদান uginal হল হেপাটক্সিক। তাই এটির অধিক মাত্রায় লিভারের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে এবং শ্বাসকার্যে সমস্যা, মুত্র ও কফ এর সঙ্গে রক্ত নির্গত হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে তুলসীর ব্যবহার ক্ষতিকারক না হলেও। এই গাছের নির্যাস দিয়ে তৈরি তেল বেশি ব্যবহার করা অত্যন্ত ক্ষতিকারক যা মানুষের ক্যান্সারের কারণ।
তুলসী পাতার ব্যবহার
তুলসী পাতা আপনি কিভাবে ব্যবহার করে খাবেন। তুলসী পাতা খাবার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে চা এর মাধ্যমে। তুলসী পাতার চা দেহের রোগ নিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে জীবাণু সংক্রমণ রুখতে সাহায্য করে। এক কাপ পানিতে তুলসী পাতা, আদা ও চা পাতা দিয়ে দিন।
এর মধ্যে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। তাছাড়া আপনার পছন্দের যে কোন খাবারে তুলসী পাতা কুচি কুচি করে কেটে মিশিয়ে নিতে পারেন। এভাবে আপনি প্রতিদিন সকালে নিয়মিত তুলসী পাতা পান করতে পারেন।
তুলসী পাতা খেলে কি কি রোগ ভাল হয়?
- পাকস্থলী শক্তি বৃদ্ধি করে
- সাধারণত জ্বর থেকে ম্যালেরিয়া জ্বর পর্যন্ত ভালো করতে পারে
- কিডনি পাথর দূর করে
- ব্লাড সুগার কমে এবং ডায়াবেটিস ভালো হয়
- ক্যান্সার নিরাময় করে
- মাথাব্যথা সারাই
- মুখের আলসার ভালো করতে পারে
- রক্ত পরিষ্কার করে, কোলেস্টেরল কমায়
- প্রস্রাব জনিত জ্বালা যন্ত্রণা বিশেষ উপকার হয়
- মুখের দাগ দূর হয়
- ব্রণ দূর করার জন্য তুলসী পাতা বিষে মুখে লাগান
- কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
কাশি হলে অন্যান্য ওষুধের থেকে উপযোগী হলো তুলসী পাতা। এর সমর্থক পেয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়। সব ধরনের কাশির ক্ষেত্রে কিন্তু তুলসী পাতা কার্যকরী হয় না। আপনি যদি মনে করেন যেটি প্রতিদিন খাব তাহলে এটি কাজ করবে না।
কাশির নিরাময়ের তুলসী পাতা অন্যতম কারণ হলো, আমাদের শরীরে প্রদায়ও বেশি থাকে যার কারণে খাদ্য আমাদের পেটে হজম হয় না। কিন্তু তুলসী পাতা খেলে সেটি সহজে হজম হয়ে যায়। তুলসী পাতার শুকনো এবং গরম প্রকৃতির যার কারণে গলার কাছে এবং ফুসফুসে আরাম দিতে পারে।
তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়মঃ একটি বা দুটি তুলসী পাতা, দু্ই টেবিল চামচ মধু, আধা চিমটি হলুদের গুঁড়ো, আদা চিমটি লং পেপার, আদা চিমটি Black গোলমরিচ, সবকিছু একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এবার সেখান থেকে রস বের করে নেন। পাঁচ মিলি করে দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে পারবেন। যেহেতু প্রতিটি উপাদান খুব গরম প্রকৃতির, তাই দুই সপ্তাহ খাওয়ার পর এটি বন্ধ দেওয়া উচিত।
তুলসী গাছের বৈশিষ্ট্য
তুলসী গাছ লামিয়াছি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধি উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ প্ল্যানটি অস্টারিজ বর্গ, লামিয়া লামিয়াছি গণ সীমান প্রজাতি ও টেনিউই ফ্লোরাম দিপদি নাম এটি একটি ঘন শাখা ও প্রশাখা বিশিষ্ট দুই ও তিন ফুট উঁচু চিরহরি।
এর মূল কান্ড castrol পাতা ২ মাইনাস ৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাচকাটা শাখা প্রশাখা অগ্রভাগ হতে পাঁচটি পুষ্পদন তো বের হয়। এবং প্রতিটি পুষ্পদ্বন্দ্বের সাঁতার আকৃতির মত দশ মাইনাস 20 টি স্তরে ফুল থাকে প্রতিটি স্তরে ছয়টি করে ছোট ফুল ফোটে।
শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
আমরা তুলসী পাতার সাথেও অনেক কিছু মিশ্রণ করে শিশুর জন্য ওষুধ তৈরি করতে পারি। যেমন-আদা, তুলসী পাতা, গোলমরিচের গুঁড়া, হলুদ, এবং মধু । এখানে আপনার বাচ্চার যদি এক বছর ছোট হয়ে থাকে তাহলে মধুর পরিবর্তে গুড় কিংবা চিনি ব্যবহার করতে পারবেন।
উপাদানের পরিমাণঃ এক টুকরো আদা খোসাটা সারিয়া থেত করে নিতে হবে, ১০ থেকে ১২ টা তুলসী পাতা, হাফ চামচ পরিমাণ গোলমরিচের গুড়, এক চিমটি পরিমাণে হলুদ, দুই টেবিল চামচ পরিমাণ মধু।
খাবার তৈরিঃ একটি প্যানে মধু বাদে সকল উপকরণ ভালো ভাবে এক গ্লাস পানিতে সেদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ করা হয়ে গেলে, গরম পানির সাথে মধুটা মিশিয়ে নিতে হবে।
বাচ্চাদের অন্তত দিনে দুবার এই সিরাপটা খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে এবং রাতে ঘুমানোর আগে। অবশ্যই বাচ্চাদের খাওয়ার আগে ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে।
খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতা চিবিয়ে বা থেতো করে খাবেন। এবং খাবারের পর অবশ্যই মুখ ভালো করে ধুয়ে নেবেন। কারণ দাঁত হোটেলে ভাগ হয়ে যেতে পারে। প্রতিদিন খালি পেটে যদি আপনি তুলসী পাতা খান আপনার বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কিডনিতে পাথর, ক্যান্সার, মাথাব্যথা, কাশি, মুখে দাগ দূর ইত্যাদি রোড থেকে মুক্তি পাবেন। তবে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক না তুলসী পাতা যেমন আমাদের উপকার করে এবং এটি অতিরিক্ত খাবার ফলে আমাদের জন্য ক্ষতি হবে
তুলসি পাতা মুখে দিলে কি হয়?
তুলসী পাতায় রয়েছে অনেক ওষুধে গুণ। যে জিনিসটা আমরা অনেকে জানি না তাহলো রূপচর্চায় তুলসী পাতা ব্যবহার। তুলসী পাতা তক সৌন্দর্য করে, তক আকর্ষণীয় ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। ব্রণের সমস্যা দূর করে তোকে দাগ মুক্ত করে তুলে তুলসী পাতা। একটি মাত্র পাতা আপনার ত্বকে যাবতীয় সমস্যা দূর করে।
- তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা
- তোশিব পাতার চা মূলত ৮ শারীরিক সমস্যা হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
- প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করে
- জ্বর সর্দি কাশি কমায়
- পেটের গন্ডগোল দূর করে
- খারাপ কোলেস্টেরল কমায়
- দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দূর করে
- দাঁত ও মুখের সমস্যা দূর করে
- মানুষের চাপ দূর করে
- ও অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমরা জানলাম তুলসী পাতা ব্যবহারে কি কি উপকার অপকার ইত্যাদি। প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি আজকে আর্টিকেল পড়ে আপনার মনের প্রশ্নের সকল জবাব পেয়েছেন। এবং আপনি উপকৃত হয়েছেন।
আপনি যদি আমাদের আর্টিকেল থেকে উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আপনার মন্তব্যটি জানান। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url