রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার - ব্রণ দূর করতে মধুর ব্যবহার

মধু আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকারী। মধু ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি আপনি খুজছেন? আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি মধু সম্পর্কে সকল তথ্য এবং কিভাবে রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার করবেন সবকিছু খুব সহজভাবে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্রঃআজকের এই আর্টিকেল থেকে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো হল- মধুর উপাদান, রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার, ব্রণ দূর করতে মধুর ব্যবহার, মধুর খাওয়ার উপকারিতা, মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় ইত্যাদি

ভূমিকা

মধু একটি ঘন তরল পদার্থ এবং মধু ঔষধি গুণে ভরপুর। যা মৌমাছি ফুলে নির্যাস হতে তৈরি করে থাকে এবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে রাখে। প্রাচীনকাল থেকেই মধু কোস্টারিকার ও শক্তি বর্ধক হিসেবে সব দেশের সকলেই বিভিন্ন ভাবে মধু ব্যবহার করে আসছে। আজকে আমরা মধু সম্পর্কে জানব। বিশেষ করে মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় এবং মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানব। আশা করি আপনি আমাদের সাথেই থাকবেন।

মধুর ব্যবহার

মধুর ব্যবহার আপনার শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ। মধু আপনি খেয়ে থাকেন, এই মধু খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ কমে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং আপনারা মধু খাওয়া পাশাপাশি রূপচর্চাতেও ব্যবহার করে থাকেন। মধু খেলে যেমন উপকার হয় তেমনি তোকে ব্যবহার করলেও উপকার হয়ে থাকে। আপনি মধু কিভাবে খাবেন বা কিভাবে তোকে ব্যবহার করবেন এ সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা রয়েছে।

মধুর উপাদান

মধুতে রয়েছে -
  • ভিটামিন বি
  • ক্যালসিয়াম
  • জিংক
  • পটাশিয়াম
  • এবং লৌহ
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক এবং রয়েছে কার্যকর নির্যাস জাতকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। নিউইয়র্কের তক বিশেষজ্ঞ লিয়ানা ক্যারোটান জানান মধু সব থেকে ভালো দিক হলো সব ধরনের মধুই উপকারে। যেসব মধুর রং অনেক গাঢ় হয় সেই মধুতে অ্যান্টিঅক্সিজেনের পরিমাণ তত বেশি হয়।

রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার

আপনি যদি প্রশ্ন করেন মধু খায় না মাথায় দেয়? এইটার উত্তর হিসেবে আমরা বলব যে এই মধু দুটোই করে। শুধুমাত্র মধু আপনি খাবারের কাজ করে না আপনি চাইলে রূপচর্চার ব্যবহার করতে পারেন। মধু আপনার জন্য খাবারের পাশাপাশি ত্বক এবং চুলের যত্নে বা রূপচর্চাতে জায়গা করে নিতে পারে। তাহলে এবার মধু দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করবেন জেনে নেয়া যাক।
  • মধ্যে যখন ময়েশ্চারাইজিং মাষ্কঃ আপনার ত্বক যখন শুষ্ক হয়ে যায়, তাহলে শুধুমাত্র এক টেবিল চামচ মধু নিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট মধুটা মুখে রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • ক্লিনজার হিসাবে মধুঃ মধু আপনার শরীরের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া হিসেবে কাজ করে থাকে। এবং মধু ত্বকের গভীরে গিয়ে ত্বকটি পুরস্কার করে থাকে। এবং তার পাশাপাশি মধু ত্বকের সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলে।
  • ব্রনের ট্রিটমেন্ট উপাদান মধুঃ মধুর ভেতরে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংনাল উপাদান আপনার ব্রণের সমস্যাগুলো ঠিক করতে সাহায্য করে থাকে। যদি আপনার মুখে ব্রণ থাকে তাহলে আপনার ব্রণের উপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট মধু লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপরে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • সান ট্যানঃ মধুতে রয়েছে অনেক পরিমাণে এন্টি ইলফিমিটরী উপাদান, যে আপনার শরীরে ট্যান পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই দূর করে। অনেক রোদ এবং গরমের কারণে আমাদের শরীরে ট্যান পড়ে থাকে। ট্যান পড়া দূর করতে মধুর সাথে এলোভেরিয়া যোগ করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট বা যতক্ষণ শুকিয়ে না যাচ্ছে। তারপরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • চুলের কোমলতা মধুঃ আপনি গোসল করার সময় শ্যাম্পুর সঙ্গে মধু মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা করুন । ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর চুলটি ধুয়ে ফেলুন। আপনি দেখতে পারবেন আপনার চুল অনেক কোমল হয়ে গেছে।
  • হেয়ার কন্ডিশনারঃ মধু আপনার হেয়ার কন্ডিশনার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। যদি আপনি নারকেল তেল এবং মধ্যে একসাথে মিশিয়ে মাথায় দিয়ে রাখেন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়

আপনাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে, মধু সঠিক পদ্ধতি খেলে যেমন আপনার উপকারে আসবে এবং ভুল পদ্ধতিতে খেলে কিন্তু আপনার অনেক ক্ষতি হবে। 
  • মধু চায়ের সাথে বা গরম পানিতে মিশিয়ে খাবার সময় প্রথমে আপনাকে মনে রাখতে হবে পানি ৪২° সেন্টিগ্রেটের এর নিচে থাকতে হবে। এরকম অবস্থায় মধু মিশে খেয়ে ফেল।
  • এবং যাদের ওজন বেশি হালকা গরম পানির সাথে লেবু এবং মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে এই এইভাবে খেলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়। এটি অনেক সময় ধরে ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে এবং এছাড়াও লিভার পরিষ্কার রাখে।
  • মধু কখনো কোন অবস্থায় রান্না করা বা গরম পানির সাথে ব্যবহার করা উচিত নয়। মধু এমনে খাওয়াই ভালো।
  • মধুর খাবার সময় সম্পর্কে অনেকে জানতে চান। মধু আপনি দিনে যে কোন সময় খেতে পারবেন। কিন্তু পুষ্টিবিদরা এবং চিকিৎসকরা বলেন, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নির্দিষ্ট সময় মধু খেতে হবে। মধু খাওয়ার সব থেকে ভালো সময় সকালে খালি পেটে মধু খাওয়া। প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধ্যে গেলে ঠান্ডা কফ ইত্যাদি ঠান্ডা জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আমরা অনেকেই চা এবং গরম দুধের সাথে মধু ব্যবহার করে খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা জানি না যে গরম পানি এবং গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া ঠিক না। মধু যখন প্রাকৃতিক অবস্থায় থাকে তখনই আপনার শরীরের জন্য মধু উপকারী।আর যদি আমরা গরম পানি বা দুধের সাথে মধুকে মিশিয়ে ফেলি তাহলে মধুর অনেক গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন মধুকে যদি গরম পানিতে মিশে বা গরম দুধের সাথে মিশিয়ে ফেলে তাহলে মধুর গুণাগুণ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মধু বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে।

ব্রণ দূর করতে মধুর ব্যবহার

মধু আপনার ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। আপনার মুখে যদি ব্রণ হয়ে থাকে মধু আপনার মুখে ব্রণ ভালো করতে সাহায্য করে। আপনার মুখে যেভাবে ব্যবহার করলে আপনার মুখে ব্রণ ভালো হবে-

প্রতিদিন সকালে উঠে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন, তারপর আপনি মুখ শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, এরপরে ভালোভাবে মধু মুখে প্রলাপের মত লাগিয়ে দেন বা আপনি মধুর সাথে আরো অনেক কিছু এড করে মুখে লাগাইতে পারেন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখে দিয়ে রাখুন। যখন দেখবেন মুখ শুকিয়ে গিয়েছে তখন হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন মুখে মাখলে ব্রণের সাথে মুখের দাগ গুলো কমে যাবে।

মধু খাওয়ার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়ঃ মধুর শরীরের রোগ প্রতিরোধের শক্তি বাড়িয়ে দেয় ফলে শরীরের ভেতরে এবং বাইরে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ হাত থেকে রক্ষা করে। মধ্যেতে রয়েছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান যেটি আপনার শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে।
  • হজমে সহায়তাঃ মধুতে অনেক পরিমাণ শর্করা থাকে এই শর্করার ফলে হজম হতে সাহায্য করে থাকে। কারণ এতে যে ডেসটিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে খুব তাড়াতাড়ি পেট ক্লিয়ার করে।
  • কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যা ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেলে কোষ্ঠ বদ্ধতা দূর হয়।
  • রক্তশূন্যতাঃ মধুতে বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ থাকার কারণে রক্তের হিমোগ্লোবিন সহায়তা করে এবং এটি রক্তশূন্যতায় বেশি ফল দেয়।
  • ফুসফুস এবং শ্বাসকষ্টঃ বলা হয়ে থাকে ফুসফুসে যাবতীয় রোগের জন্য মধু অনেক উপকারী। একজন এজমা শ্বাসকষ্ট রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেওয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস নিতে পারবে। আবার অনেকে মনে করে এক বছর পুরাতন মধু শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য উপকারী।
  • গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তিঃ হজম সমস্যা সমাধানে কাজ করে মধু। একটি গবেষণা থেকে বলা হয়েছে গ্যাস্টিক আলসার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটি ব্যক্তিকে দিনে তিন বেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারেন।
  • যৌন দুর্বলতাঃ ছেলেদের মধ্যে যাদের জনদরগুলোতে সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন মধুর সাথে ছোলা মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাবেন। এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য মধু কুসুম গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে খুবই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তাছাড়া প্রতিদিন কালো জিরা সাথে মধু দিয়ে চিবিয়ে খেলে ভাবনি প্রতিদিন ২ চামচ আদারস মধু দিয়ে খেলে প্রচুর পরিমাণে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
  • পাকস্থলে সুস্থতাঃ পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমে সমস্যা দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্লোনিন অ্যাসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় এবং বুক জ্বালা পোড়া বা বমি বমি ভাব এগুলো দূর করে।
  • দেহের তাপ উপাদানেঃ মধু শীতের সময় আমাদের শরীরের তাপ গরম রাখতে সাহায্য করে। দুই চামচ কুসুম গরম পানিতে খেলে শরীর তরতাজা থাকে।
  • পানি শূন্যতাঃ ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহের পানিশূন্যতা রোধ করে।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ মধু আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তির জন্য খুবই ভালো। গাজরের রসের সাথে যদি আপনি মধু মিশিয়ে খান তাহলে আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ে।
  • ওজন কমায়ঃ মধু ফ্যাট কমায়, মধু পেট পরিষ্কার করে ফলে ওজন কমে এবং মধুতে কোন চর্বি নেই।
  • হার ও দাঁত গঠনেঃ মধুর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত হার এবং চুলের গোড়া শক্ত রাখে এবং নখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ইত্যাদি

লেখক এর মন্তব্য

প্রিয় গ্রাহক আশা করি আপনি মধু সম্পর্কে সকল তথ্য জেনে উপকৃত হয়েছেন। আশা করি আপনাকে খুব সহজে আমি মধু সম্পর্কে বুঝাইতে পেরেছি। এমন আরও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখুন এবং আপনার মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানান। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url