ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা - ড্রাগন ফলের উপকারিতা - ড্রাগন ফলের রেসিপি
ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানেন? আপনি হয়তো অনেক জায়গায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করছেন, কিন্তু কোথাও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না। এই আর্টিকেল থেকে আপনি খুব সহজে ড্রাগন ফলের সকল তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআজকে মূলত ড্রাগন ফল নিয়ে যে তথ্যগুলো লেখা হয়েছে সেগুলো হল-ড্রাগন ফলের উপাদান, ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম, ড্রাগন ফলের উপকারিতা, ড্রাগন ফলের ক্ষতিকারক দিকগুলো ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা এবং ড্রাগন ফলের রেসিপি সম্পর্কে খুব সহজভাবে লেখা হয়েছে।
ভূমিকা
ড্রাগন ফল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল, ড্রাগন ফল খেতে অনেকটা তরমুজের মত। ড্রাগন ফলের উৎপত্তিস্থল আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া হলেও এই ড্রাগন ফলের পুরো বিশ্বে এখন চাষ হয়।
চমৎকার আকৃতি এবং দারুণ পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি স্বাস্থ্য সচেতনদের দৈনন্দিন খাবার অভ্যাসে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ড্রাগন ফলের চমৎকার উপকারিতা,ক্ষতিকর দিক এবং ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
ড্রাগন ফলের উপাদান
ড্রাগন ফল সকলের জন্য অনেক উপকারী। ড্রাগন ফলে অনেক পরিমাণের উপাদান থাকে যা দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। মূলত যে উপাদানগুলো রয়েছে সেগুলো হল-
- আয়রন
- ফাইবার
- ভিটামিন সি
- লক্সেটিভ
- ক্যারোটিন
- এন্টি অক্সিজেন
- পটাশিয়াম
- ফসফরাস
- ক্যালসিয়াম
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফল আপনি যেকোনোভাবে খেতে পারেন। ড্রাগন ফল চাইলে আপনি কেটেও খেতে পারেন কিংবা আপনি হাত দিয়ে ছাড়িয়ে খেতে পারেন।
ড্রাগন ফল পাকলে খোশাগুলো অনেক হালকা হয়ে থাকে যার ফলে আপনি হাত দিয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিতে পারেন। কিন্তু ড্রাগন ফল কাটার সঠিক প্রসেস রয়েছে সেটি হল-
- প্রথমে আপনাকে ড্রাগন ফলটি সুন্দরভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
- ড্রাগন ফলের উপরের দিকে এবং নিচের দিকে কেটে নিতে হবে।
- একটি পাত্রে রেখে ড্রাগন ফলটি মাঝ বরাবর কেটে নিতে হবে।
- এরপরে আপনি ড্রাগন ফল টি আলতোভাবে খোসা ছাড়িয়ে নিতে পারেন।
- এবং সুন্দর করে ড্রাগন ফলটি কেটে নিজে এবং অন্যদের পরিবেশন করতে পারেন।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ একটি ড্রাগন ফলে প্রায় ৮ গ্রাম ফাইবার থাকে। যার দৈনিক সুপারিশ কৃত পরিমানের ৪ ভাগের ১ ভাগ। ড্রাগন ফল অন্তরের বর্জ্যঅধুরি করনের সহায়তা করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো অসুখ রয়েছে তারা ড্রাগন ফল খেলে উপকার পাবেন।
- হার্টের উপকার করেঃ ড্রাগন ফলের বীজে Omega 3 এবং Omega 9 ফ্যাটি এসিড রয়েছে। ড্রাগন ফলের ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিডে প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে। এ কারণে ড্রাগন ফল খেলে হার্টের রোগের যোগী এবং জয়েন্টে ব্যথা কমে যায়।
- হারের সাস্থ ঠিক রাখেঃ অধিকাংশ ফলের চেয়ে ড্রাগন ফলে ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে। এটা হারের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অস্টিও প্রোসেস প্রতিরোধ করে। এক পাটে ড্রাগন ফলের দৈনিক সুপারিশকৃত ম্যাগনেসিয়াম এর প্রায় ১৮% পাওয়া যায়। মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে গেছে এমন নারীদের হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ড্রাগন ফল খুবই উপকারী।
- রক্ত চলাচল বজায় রাখেঃ নারীদের মধ্যে আয়রনের ঘাটতি বেশি দেখা যায়। Meat, fish, nuts বা dal জাতীয় খাদ্য থেকে আমরা অনেক বেশি আয়রন গ্রহণ করে থাকি। খুব কম সংখ্যক ফলে উচ্চ পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। এসব ফলের মধ্যে একটি হলো ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলে ১.৯ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য আয়রন প্রয়োজন যা শরীরের টিস্যু তে অক্সিজেন পৌঁছাতে লোহিত রক্তকণিকাকে সাহায্য করে।
- চুল পড়া প্রতিরোধ করেঃ আয়রনের ঘাটতির কারণে চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে চুল পড়া কমতে পারে। ড্রাগন ফল রক্তের স্বল্পতার উৎসর্গ প্রশমিত করতে পারে। যেমন- অত্যাধিক ক্লান্তি, ত্বকের বিবর্ণতা, মনোনিবেশের সমস্যা, মাথা ব্যথা ও হাত-পায়ে ঠান্ডা অনুভূতি।
- ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করেঃ ভাইরাস সংক্রমনে আমরা কমলার মত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের দিকে ঝুকে পরি। কারণ ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেম কে শক্তিশালী করে তোলে। কিন্তু ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ডায়েটে ড্রাগন ফলকে রাখের বিবেচনা করতে পারেন।
ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক
অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার কারণে আমাদের শরীরে অনেক সমস্যা হতে পারে। ড্রাগন ফল খাবার ভুলের কারণে আপনি অনেক বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাবার খেলে আমাদের যে ক্ষতি হয়-
- ড্রাগন ফলে পটাশিয়াম থাকে, এই পটাশিয়াম আমাদের শরীরে অতিরিক্ত প্রবেশ করলে আমাদের ব্লাড প্রেসার অনেক কম লেভেলের হয়ে যেতে পারে। যাকে হাইপারটেনশন বলা হয়।
- হাইপারটেনশন হওয়ার ফলে আমাদের ব্লাড প্রেসার উঠানামা করতে পারে যার ফলে -বমি বমি ভাব, ডিপ্রেশন, জ্ঞান হারানো ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাবার ফলে অনেকের হার্টের রোগ, হাঁপানি রোগ, ডায়াবেটিসের রোগ বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ মধুর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন
এর জন্য আপনাকে অবশ্যই নিয়ম মেনে ড্রাগন ফল খেতে হবে। যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই ড্রাগন ফল থেকে দূরে থাকবেন।
ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা
ড্রাগন ফল খেয়ে আমরা সবাই ড্রাগন ফলের খোসা ফেলিয়ে দেই। কিন্তু আমরা কেউ জানি না যে ড্রাগন ফল কতটা আমাদের জন্য উপকারী। আজকে আমরা জানবো ড্রাগন ফলের খোসা দিয়ে কি কি করা যায় এবং কিভাবে আপনি সেই মূল উপাদান তৈরি করবেন।
প্রসেস
- ড্রাগন ফলের খোসাটা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এবং খোসা সবুজ অংশ গুলো কেটে বাদ দিয়ে দিতে হবে। মূলত লাল যে খোসা টুকু আছে সেটুকু নিতে হবে।
- ড্রাগন ফলের খোসা গুলো ছোট ছোট টুকরো করে ফেলতে হবে। আপনি চাইলে ড্রাগন ফলের খোসাগুলো টুকরো টুকরো না করে পুরোটুকু নিতে পারেন। কিন্তু ড্রাগন ফলের খোসা গুলো ছোট ছোট টুকরো করলে অনেক ভাল হবে।
- এবার আপনি চুলাতে একটি পাত্র বসিয়ে দিয়ে, পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে। আপনি যে পরিমাণ পানি দিবেন এগুলো মনে রাখতে হবে। আপনি চেষ্টা করবেন সবকিছুই মাফ করে দেওয়ার।
- প্রথমে পানি হালকা গরম করে নিয়ে তার মধ্যে ড্রাগন ফলে খোসাটা দিয়ে দিন। এবং ড্রাগন ফলের খোসাটা দেওয়ার পরে চুলার তাপটা একটু বাড়িয়ে দিন। এবং অনবরত একটি চামচ এর মাধ্যমে নাড়তে থাকবেন। ড্রাগন ফলের খসাগুলো ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে।
- যখন দেখবেন পানি লাল হয়ে গেছে এবং খোসার রংগুলো পরিবর্তন হয়ে গেছে তখন আপনি চুলা থেকে পাত্র টি নামিয়ে নেবেন।
- এরপর একটি ছাঁকনির সাহায্যে পানি গুলো ভালোভাবে ছেকে নিতে হবে।
- আবার একটি পাত্র নিতে হবে এবং চুলাতে বসিয়ে ড্রাগন ফলের খোসা থেকে যে পানি বের করে রেখেছেন সে পানি পাত্রের মধ্য দিতে হবে।
- এবং চুলার তাপটি মিডিয়াম রাখতে হবে। এই অবস্থায় পানিতে কিছু সময় নেড়ে নেবেন।
- তারপরে সঠিক পরিমাণে চিনি দিতে হবে। আপনি যে পরিমাণ মিষ্টি পছন্দ করেন সে পরিমাণ চিনি দিয়ে দিবেন।
- চিনির দানাগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত ভালোভাবে মিশিয়ে বা গলে না যা পর্যন্ত পানি টি নেড়ে নিতে হবে।
- চিনি পানিতে ভালোভাবে মিশে গেলে এবার দিয়ে দিবেন আগার আগার পাউডার। আপনি এখানে চাইলে কর্নফ্লাওয়ার টা ব্যবহার করতে পারেন। স্বল্প পরিমাণে পাউডার টি দিয়ে দিতে হবে।
- আপনারা চাইলে এখানে ফ্রুট কালার ব্যবহার করতে পারেন। ফ্রুট কালার ব্যবহার না করলেও অনেক ভালো কালার আপনি দেখতে পারবেন।
- এবং পানি যতক্ষণ পর্যন্ত ঘন না হয়ে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে নেড়ে নিতে হবে। পানিটি ঘন হয়ে গেলে পাত্রটি নামিয়ে ফেলুন।
- এরপর আপনাকে একটি কাঁচের বোতলে ড্রাগন ফলের খোসার জাল দেওয়া পানি ঢেলে নিতে হবে।
- কিছুক্ষণ পর দেখবেন যেটি ঘন হয়ে গেছে। এবং এটি একটি জেলিতে পরিণত হয়ে গেছে।
- আপনি এভাবে ড্রাগন ফলের খোসা ফেলিয়ে না দিয়ে বাড়িতে বসে খুব সহজে জেলি তৈরি করতে পারবেন।
ড্রাগন ফলের রেসিপি
ড্রাগন ফলটি পুষ্টিতে ভরপুর, ড্রাগন ফলটি আমরা বিভিন্নভাবে খেতে পারি। বিশেষ করে আমরা যেগুলো পছন্দ করে থাকি যেমন ড্রাগন ফলের জুস, ড্রাউনফলের পুডিং ইত্যাদি।
ড্রাগন ফলের জুস বানানোর নিয়ম
- প্রথমে একটি ড্রাগন ফল নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে
- ড্রাগন ফলটি মাথার দিকে এবং গোড়ার দিকে কেটে ছিলে নিতে হবে
- ড্রাগন ফলটি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে
- তারপর একটি ব্লেন্ডার নিয়ে তার মধ্য ড্রাগন ফল কুচিগুলো দিতে হবে
- ধনেপাতা কুচি কুচি করে নিয়ে ব্লেন্ডারের মধ্যে দিতে হবে, ধনেপাতা না থাকলে সমস্যা নেই
- এক কাপ পরিমাণে চিনি দিতে হবে
- এরপরে লেমন জুস এক টেবিল চামচ দিতে হবে
- দের কাপ পরিমাণে ঠান্ডা পানি দিতে হবে
- এবং ব্লেন্ডার করে খাবারের জন্য উপযোগী একটি জুস তৈরি হয়ে যাবে
এভাবে আপনি হাতের কাছে থাকা কিছু উপাদান দিয়ে সুস্বাদু ড্রাগন ফল জুস বানাতে পারবেন। ড্রাগন ফল জুস আরো অন্যান্য ভাবে বানানো, যায় আপনি চাইলে মিল্কশে ড্রাগন ফল জুস বানাতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ পাতি লেবু খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফলের পুডিং তৈরি
- প্রথমে ড্রাগন ফল টি ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে
- ড্রাগন ফলের খোসাটি ছাড়িয়ে নিয়ে ড্রাগন ফলটি কুচি কুচি করে কাটতে হবে
- ড্রাগন ফল কুচি কুচি টুকরোগুলো ব্লেন্ড করে নিতে হবে
- একটি পাত্রে দুই কাপ পরিমাণে পানি দিতে হবে। প্রায় এক লিটার পানির মতো দিতে হবে
- পাত্রের মধ্যে ১০০ গ্রাম সাবুদানা দিতে হবে
- আপনি সাগর দানা পর্যাপ্ত পরিমাণে সিদ্ধ করে নিতে হবে
- মোটামুটি সিদ্ধ হওয়ার পরে ড্রাগন ফলের জুস টা দিয়ে দিতে হবে। আপনি ড্রাগন ফলের জোসটা ছেঁকে দিতে পারেন
- তারপরে ড্রাগন ফল এবং সাবুদানা ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে
- অন্যদিকে আপনাকে একটি পাতিলে ১ লিটার দুধ ঝাল দিয়ে হাফ লিটার করে নিয়ে নিতে হবে
- তার মধ্যে একটা পরিমাণে চিনে দিতে হবে
- হাফ চা চামচ লবণ দিতে হবে আর দুই চাচা চামচ আগার আগার পাউডার দিতে হবে
- গরম গরম দুধ টা সাগু দানার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে
- এবং একটি টিফিন বাটিতে মিশ্রণটি ঢেলে রেখে দিতে হবে। এবং ঠান্ডা হয়ে গেলে নরমাল ফ্রিজে প্রায় তিন ঘন্টার জন্যরেখে দিতে হবে।
এইভাবে খুব সহজে বাড়িতে সুস্বাদু পুষ্টিগনে ভরা ভোটিং বানিয়ে আপনি এবং আপনার বাচ্চাদের খাওয়াতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
আজকের আর্টিকেল থেকে ড্রাগন ফল সম্পর্কে সকল তথ্য এবং দাগন ফল দিয়ে কি কি করতে পারবেন, ড্রাগন ফল খেলে কি কি হয় এবং তখন ফলের খোসা দিয়ে কি করতে পারবেন।
প্রিয় গ্রাহক আশা করি ড্রাগন ফল সম্পর্কে জেনে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আপনার মন্তব্যটি কমিটির মাধ্যমে জানান। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url