সঠিক পদ্ধতিতে শীত কালে করলা চাষ - করলা গাছের রোগ ও প্রতিকার
প্রিয় গ্রাহক আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি সঠিক পদ্ধতিতে শীতকালে করলা চাষ এবং
করলা চাষের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে আলোচনা করা হয়েছে। আশা
করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি খুব সহজে করলা চাষ করতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন, সঠিক পদ্ধতি
শীতকালের করলা চাষ, করলা চাষের উপযুক্ত সময়, করলা গাছের রোগ ও প্রতিকার, করলা
গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ, মাছি পোকা দমনে কীটনাশক, করলা গাছে হলুদ হলে করণীয়।
সঠিক পদ্ধতিতে শীত কালে করলা চাষ
মাটি তৈরিঃ আপনাকে প্রথমে অবশ্যই মাদার তৈরি করে নিতে হবে। এবং এই মাদার
তৈরি করার জন্য কোন কোন উপাদান লাগে তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
আরো পড়ুনঃ সঠিক নিয়মে শিম চাষ পদ্ধতি
উপাদান- গোবর সার, শুটকি মাছ, খোল, ট্রাইকোডার্মা
- প্রথমে আপনি যেখানে মাদার তৈরি করবেন সে মাটি ঝুরঝুরা করে নেবেন
- এবার এই মাটির মধ্যে ১০০ গ্রাম গোবর সার দিয়ে দেন। আর ভালোভাবে মিশ্রণ করে নিন
- শুটকি মাছের গোড়া করে নিন
- এবং তার সাথে খোলের গোড়া নেন
- আর তার সাথে ট্রাইকোডারমা নিন
- এবার শুটকির গুড়া ৫০% , ট্রাইকোডার্মা ও খোলের গুড়া ৫০% করে মিশ্রণ করুন
- এ তিনটি মিশ্রণ গুলো মাদারের মাটির সাথে ভালো মিশিয়ে নিন
- এভাবে খুব সহজে করলা চাষের জন্য মাটি তৈরি করে নিতে পারবেন
করলা চারা রোপনঃ করলার চারাটির যদি কোকোপিটের বা কাগজের ঠোঙ চারা গুলো
তৈরি হয় সে ক্ষেত্রে একটি পদ্ধতিতে চারা লাগাতে হবে। করলা চারা লাগানো ক্ষেত্রে
কিছু নিয়মাবলী রয়েছে সেগুলো হল-
- প্রথমে মাদারের মাটিতে গর্ত করে নিতে হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চারা মাটির লেভেলে গর্ত করে নিতে হবে
- এবার চতুর্পাশ থেকে মাটিগুলো দিয়ে চারাটির গোরা পর্যন্ত ঢেকে দিন
- আর অবশ্যই মনে রাখবেন বেশি উচা করবেন না। যার সাথে থাকা মাটির লেভেল অনুযায়ী মাটি দিবেন। উপরে বেশি মাটিতে দিলে গরম পৌঁছে যেতে পারে
- চারাটি লাগানোর শেষে অবশ্যই পরিমাণমতো পানি দিয়ে দিবেন
- আর তারাটি লাগানোর চারদিন পরে আপনি জমিতে ছেচ দিতে পারবেন
- করলার চারা লাগানোর দূরত্বঃ করলা চারা লাগানোর ক্ষেত্রে তিন হাত পর ফল লাগাতে হবে। এবং একটি সারি থেকে অন্য সারি দূরত্ব চার হাত।
প্রিয় গ্রাহক আশা করি শীতকালের করলা চাষ কিভাবে করবেন, কিভাবে প্রত্যেকটা
মাদারের খাবার দেবেন এবং কত দূরত্বে চারা লাগালে ভালো হবে। আশা করি আমাদের নিয়মে
শীতকালে করলা চাষ করলে অবশ্যই অনেক ভালো ফল পাবেন। আর আপনার মতামতটি কমেন্টের
মাধ্যমে জানান।
করলা চাষের উপযুক্ত সময়
করালা যদি চাষ করি তাহলে কোন সময় চাষ করতে হবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আমরা যারা ফসল চাষের সাথে যুক্ত থাকি, সঠিক সময়
সঠিকভাবে যদি চাষাবাদ না করে থাকি তাহলে অনেক লস গুনতে হয়।
আরো পড়ুনঃ আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ করুন
কোন সময় চাষ করবেনঃ প্রথমে বাজারের দিকে চলে যাই বাজারে কোন সময় করার
দাম বেশি থাকে (প্রথম আমরা যখন শুরুতে করলা বাজারে দেখি তখন তার বেশি থাকে)
সাধারণত যেটা হয় আমরা জানুয়ারির শুরুতে এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা লাগাইতে
পারি
তাদের কিন্তু দামগুলো বেশি থাকে এবং আপনি যদি এই মুহূর্তে করলা চাষ করতে চাচ্ছেন
এবং আলু ছিল জমিতে। আপনি যদি এক্সট্রা ভাবে যদি আগামীকাল নামাতে চান তাহলে আপনাকে
চারা কিনে নিয়ে লাগানোটাই পারফেক্ট।
(দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে আমরা যদি লাস্ট সেগমেন্টে টার্গেট করি তাহলে হচ্ছে জুন ও
জুলাই মাসে যদি আমরা রোপন করি তাহলে দেখা যাচ্ছে ওই সময় এবং যে সময় বাজারে নামে
সাধারণত করলা লাগানো থেকে ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহ শুরু হয় এবং এইটা
৪ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত কন্টিনিউ করা যায়।
তো আপনি এই দুইটা সময়ে করোলা চাষ করতে পারেন এবং ভালো ফলাফল এবং ভালোভাবে বাজার
করতে পারেন।
করলা গাছের রোগ ও প্রতিকার
করলা গাছের পাতা হলুদ হলে করনীয়ঃ
সময়ঃ যাদের করলা গাছের বয়স ১.৫ থেকে ২ মাস সেসব গাছে এমন পাতা হলুদ হয়ে
যায়। এ সময় করালা গাছের ফলন কম, গাছে দুর্বল, পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে এমন নানা
রকম সমস্যা হয়ে থাকে।
১। সমাধানঃ এক বিঘা জমির জন্য-
- ৫০ কেজি সিটি কম্পোস্ট
- ৫০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট
- ১৫ কেজি গুড়ো সরষে খোল
- ২০ কেজি এন পি কে ১০:২৬:২৬
- ৫০ কেজি কাঁচা গোবর সার
ব্যবহারঃ এ সকল উপাদানগুলো একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে পলিথিনের মাধ্যমে
ভালোভাবে বেঁধে রাখতে হবে। আর এই উপাদানগুলো একটি ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে।
এবং প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ওই একই স্থানে রাখতে হবে।
আরো পড়ুনঃ স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি
এক সপ্তাহ পরে সে উপাদানগুলো আবারো ভালোভাবে মিশ্রণ করে নিতে হবে। এবার আপনি
প্রতি মাদায় করলা গাছের গোড়াতে ১ ফুট দূরত্বে রাউন্ড করে সহভাবে সার প্রয়োগ করে
মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এবং রসের অভাব থাকলে হালকা ছেচ দিতে হবে।
২। সমাধানঃ সার প্রয়োগে দুইদিন পর mandi প্রবামাইট ২৩.৪% এসি এই জাতীয়
ছত্রাকনাশক যেমন-করলা গাছের পাতা হলুদ হলে করনীয় Syngenta কোম্পানির
Revus।
প্রতি লিটার জলে .৮ থেকে ১ মিলি এবং রামসারস কোম্পানির ALLWIN GTOLD Super প্রতি
লিটার পানিতে ২ মিলি হিসেবে মিশিয়ে গাছ ও পাতা ভিজে ভালোভাবে স্প্রে করবেন।
করলা গাছের পাতা কোকড়ানো রোগঃ
ধরনঃ এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই ভাইরাসের জন্যই করলা পাতা কুক্রিয়া
যায়। এবং এই ভাইরাস টি সাদা মাছের দ্বারা সরিয়ে থাকে।
ভাইরাস কারণে গাছের পাতা কুঁকড়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। ভাইরাসের
ফলে গাছের অতিরিক্ত শাখা প্রশাখা বের হয় না। গাছটির ফুল ও ফল ধারণ ক্ষমতা
হারিয়ে ফেলে।
সময়ঃ ওনাকে প্রশ্ন করে থেকে ভাইরাসটি কখন হয়? তারা অবস্থা এবং গাছের
বারন্ত অবস্থায় এই পাতা কুঁকড়ানো ভাইরাসটি দেখা দেয়।
মাকরঃ কলা গাছে পাতা কুক্রিয়ে যাওয়ার ভাইরাস সহজে দমন করা সম্ভব নয়।
কিন্তু এ পাতা কোকড়ানোর মূল হোতা হলো মাকর। এবং এই মাকরের কারণেই করলা গাছের
পাতা কুড়ে যায় এর জন্য আপনাকে অবশ্যই আগে মাকর দমন করার ওষুধ বা কীটনাশক
ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ সঠিক পদ্ধতিতে আঙ্গুর চাষ করুন
মাকর দমন কীটনাশকঃ মাখন না শোকের মধ্যে আপনার MITI KILL ব্যবহার করতে পারেন এটি
২০ এমএল ২০ লিটার ট্যাঙ্কে পানিতে গোলে স্প্রে করতে পারেন। আরে MITI KILL ব্যবহার
করার পরে ফলাফল অনেক ভালো পাবেন। তাহলে আপনার করলা গাছের আর পাতা কোকড়ানো সমস্যা
হবে না।
মাছি পোকা দমনের কীটনাশকঃ
- বালাই নামঃ ফলের মাছি পোকা
- শস্য নামঃ করলা
- গ্রুপ নামঃ প্রফেনফস (৪০%) + সাইপারমেথ্রিন (২.৫%)
- বাণিজ্যিক নামঃ সবিক্রন ৪২৫ ইসি
- কোম্পানির নামঃ সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড
- ডোজঃ ২ মিলি/প্রতি লিটার পানি
- এপিঃ ৩২২
- বালাই নামঃ ফলের মাছি পোকা
- শস্য নামঃ করলা
- গ্রুপ নামঃ কিউলিউর
- বাণিজ্যিক নামঃ কিউ ফেরো
- কোম্পানির নামঃ ইস্পাহানী এগ্রো লিমিটেড
- ডোজঃ ৭০ লিঃ/হেঃ
- এপিঃ ২
মাছি পোকার ধরনঃ সাধারণত এই মাছি পোকাটি 10 থেকে 57 মিলিমিটার লম্বা হয়ে
থাকে এবং এর গায়ের রং লালচে ও বাদামি হয়ে থাকে। মাছে পোকার ঘাড়ের দিকে হলুদ ও
রঙের দাগ যুক্ত রেখা রয়েছে। এই মাছিটির পাখার নিচের এক কর্নারে দিকে কালো দাগ
আছে।
এই মাসেটির পেট মোটা হয়ে থাকি এবং এর পেছনের দিকে একটি সরু ও সূচালোর মতো একটি
আল রয়েছে। এবং এ মাছি পোকার ডিম গুলো সোশ্যাল হয় এবং একদিকে বাঁকা হয়ে থাকে।
ক্ষতির লক্ষণঃ কচি ফলের মধ্যে স্ত্রীর মাছি ডিম পাড়ে, এবং মাছির সেই ডিম
থেকে কিরা গুলো বের হয়। আর সে কিরা গুলো ফলের শ্বাসগুলো খেয়ে ফেলে যার ফলে
ফলগুলো পৌঁছে যায় এবং ঝরে পড়ে যায়।
কীটনাশক প্রয়োগঃ এ কীটনাশকে নাম হলো- Syngenta কোম্পানির Alika
Thiamethoxam 12.6% + Lambda Cyhalothrin 9.5% ZC) is a broad spectrum
insecticide ।
ডোজঃ যদি আপনার জমিতে বেশি মাছি থাকে তাহলে প্রতি 15 লিটারের পানিতে
মিশিয়ে দেবেন। অতিরিক্ত পোকা থাকলে 25 মিলি এবং মোটামুটি পোকা থাকলে 15 মিনিট
করে স্প্রে করবেন।
লেখক এর মন্তব্য
আশা করি আর্টিকেল থেকে আপনি করলা গাছের চাষ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।
আর্টিকেল থেকে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার মতামত কমিটির মাধ্যমে
জানাবেন।
আর যদি কোন কিছু বুঝতে না পেরে থাকেন বা কোন কিছু প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই
আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। আমাদের ওয়েবসাইটে ফলো করে রাখুন যেন নতুন আর্টিকেল
দেওয়ার সাথে সাথে আপনার কাছে নোটিফিকেশন যায়। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে
অসংখ্য ধন্যবাদ।
A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url