কলা গাছের রোগ ও তার প্রতিকার - কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি
কলাতে রয়েছে অনেক
পুষ্টি উপাদান। কলা আমাদের শরীরে পুষ্টির অভাব দূর করতে সাহায্য করে। আজকের আর্টিকেল থেকে
আপনি কলা চাষের রোগ ও প্রতিকার এছাড়াও কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে
পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আজকের এই আর্টিকেল থেকে যে বিষয়গুলো মূলত আলোচনা করা
হয়েছে সেগুলো হল: কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে কলা চাষ করতে পারবেন, কলা গাছের রোগ ও
প্রতিকার এছাড়াও কলা গাছের সঠিক পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ।
ভূমিকা
কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি কেনারা মানব বুদ্ধিমত্তার ও প্রযুক্তির উন্নত ফলাফল,
বৃষ্টি, তাপমাত্রা, আবহাওয়া, ভূমির উপযোগিতা এবং বীজের বিশেষজ্ঞ বীজ এবং উন্নত
প্রযুক্তির মাধ্যমে হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ সঠিক নিয়মে শিম চাষ পদ্ধতি
এই কলা চাষ আপনারা হয়তো অনেকেই করতে চান কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে করার চাষ করতে
পারেন না। আপনি কিভাবে সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে কলা গাছের কীটনাশক বা কলা বাগানে সার
দেওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি
আধুনিক পদ্ধতিতে করা চাষ করার ফলে খুব সহজেই উন্নতি করা যায়। কলা চাষের আধুনিক
পদ্ধতি একটি প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি, যা উন্নত প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, এবং
বাস্তুসংস্কৃতির সাথে যোগাযোগ করে। এটি উচ্চ উৎপাদন, মান সংরক্ষণ এবং পরিবারের
জীবনধারার বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে।
আপনি কিভাবে সঠিক পদ্ধতিতে কলা চাষ করবেন এছাড়াও কলা চাষে রোগ বালাই কিভাবে দমন
করবেন বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নিন কলা চাষের পদ্ধতি-
গর্ত তৈরিঃ গর্তর পরিমাণ হবে ১ ফিট এবং গর্তের গভীরতা পরিমাণ মতো রাখতে
হবে। গর্তের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার, গোবর সার, পটাশ ডিএপি এগুলো গর্তের
মধ্যে দিয়ে রাখুন। এই গর্তটি ১৫ থেকে ২০ দিন ভালোভাবে ঢেকে রেখে দিতে হবে।
সারির দূরত্বঃ একটি গর্ত থেকে আর একটি গর্ত দূরত্ব চার হাত। বা গর্ত থেকে
গর্তের দূরত্ব ৫ ফিট করে রাখুন। অবশ্যই কলা গাছ সারি করে লাগাবেন তাহলে কলার ফলন
ভালো পাবেন।
চারা রোপনঃ মাটি এবং গর্ত বা সারি তৈরি করার পরে এবার চারার রোপন করার
সময় চলে এসেছে। অবশ্যই ভালো মানের এবং সুস্থ ছাড়া আপনাকে বেছে নিতে হবে। সেই
চারা গুলো গর্তের মধ্যে রেখে ভালোভাবে চারদিকে মাটি গুলো দিয়ে চেপে দিন।
আরো পড়ুনঃ আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ করুন
পরিচর্যাঃ কলা গাছের চারা রোপনের পরে আপনাকে অবশ্যই কলাগাছের পরিচর্যা
করতে হবে। কলা গাছের পরিচর্যা অবহেলায় কলাগাছ মারা যেতে পারে। এজন্য যারা
লাগানোর পরে অবশ্যই কলাগাছে সেচ দিয়ে দিবেন। কলা গাছে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
আর কলা গাছের চারদিকে ঘাস হলে পরিস্কার করে দেবেন। এভাবে খুব সহজে কলাগা ছাড়া
রোপন করতে পারেন। নিম্নলিখিত কলার রোগ ও প্রতিকার এছাড়াও কলা গাছের সঠিক
পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ সম্পর্কে বলা রয়েছে।
কলা গাছের রোগ ও তার প্রতিকার
কলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল এবং এই কলা সারা বছর পাওয়া যায়। কলা গাছের
মারাত্মক অনেক রোগ বালাই রয়েছে যার ফলে কলাগাছের ফলন কমে যেতে পারে। এজন্যই
কলাগাছের কোন লক্ষণ দেখা মাত্রই প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে কথা না
বাড়িয়ে চলন জেনে নিন কলা গাছের রোগ ও প্রতিকার-
আরো পড়ুনঃ করলা গাছের রোগ ও প্রতিকার
১। পানামা রোগঃ এটি ফিউজেরিয়াম অক্রিস্পোরাম নামক ছত্রাকের কারণে হয়ে
থাকে। এই রোগের প্রথমত বয়স্ক পাতার কিনারা হলুদ হয় এবং পরবর্তী সময় কচি পাতা
হলুদ হয়ে যায়। পরে পাতার বোটার কাছে ভেঙে নিচের দিকে ঝুলে পরে ও গাছ মারা যায়।
আবার কোন কোন সময় গাছ লম্বালম্বি ভাবে ফেটে যায় এবং ভেতরে ভাস্কুলার বান্ডেলে
হলদে বাদামী রং ধারণ করে।
প্রতিকারঃ আক্রান্ত কাজ করা থেকে উঠিয়ে পুরে ফেলতে হবে। রোগ মুক্ত গাছ
থেকে চারা সংগ্রহ করতে হবে। কোন মতে আক্রান্ত গাছ থেকে চারা সংগ্রহ করা যাবে না।
অনেক হারে কলাগাছ আক্রান্ত হলে ওই জমিতে দুই বছর কলা চাষ করা যাবে না।
চুন প্রয়োগ করে মাটির PH বৃদ্ধি করতে হবে। অথবা কলার চারা লাগানোর ১৫ থেকে ২০
পূর্বে প্রতি গর্তে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ডলোমাইট চুন ব্যবহার করা যেতে পারে। চারা
রোপনের ১ মাস পরে কার্বন-ডাইজিন জাতীয় ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে
মিশিয়ে গাছের চারদিকে প্রতি মাসে একবার করে প্রয়োগ করতে হবে।
২। গুচ্ছ মাথা রোগঃ এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগের কারণে কলাগাছের
বৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং পাতাগুলো গুচ্ছ আকারে বের হয়। পাতা আকারে খাটো অপ্রশস্ত ও
ওপরের দিকে খাড়া থাকে। কচি পাতার কিনারাগুলো উপরের দিকে বাগানো থাকে এবং হলদে রং
ধারণ করে। পাতার শিরার মধ্যে ঘন সবুজ দাগ পরে।
প্রতিকারঃ আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্রই গোরা সহ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ভাইরাসের বাহক জাব পোকা ও থ্রিজি পোকা দমনের জন্য অনুমোদিত বালাই নাশক যেমন-
এমিডা ক্লোরোপিড প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে
হবে।
৩। সিগাটোগা রোগঃ কলা গাছের সিগাটোগা রোগ সার্কাসপুরামুসি নামক ছত্রাকের
দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল কলার গাছের ৩য় ও ৪র্থ কচি
পাতা ছোট ছোট হলুদ দাগ পরে। দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হয় এবং বাদামি ঝলসানো রং ধারণ
করে। বেশি আক্রান্ত পাতাগুলো আগুনে ঝলসানো বা পুরা মনে হয়। আক্রান্ত গাছের ফলন
১০-১৫% কম হতে পারে। তীব্র আক্রমণের ফলে সম্পন্ন পাতা শুকিয়ে যায়।
প্রতিকারঃ রোগ মুক্ত চারা লাগাতে হবে এবং পাতলা করে গাছ লাগাতে হবে।
আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত পাতাগুলো কেটে ফেলে রোগের তীব্রতা কমিয়ে
ফেলানো যায়। ২ থেকে ৩ মাস পর পর গাছের নিচের দিকে পাতাগুলো কেটে পুড়ে ফেলতে হবে।
জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। রোগের আক্রমণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে,
কার্বনডাইজিং গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম অথবা প্রোপিকোনাজল
গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশে ৭ থেকে ১০ দিন পরপর ৩
থেকে ৪ বার স্প্রে করতে হবে।
এছাড়াও কলা গাছে রোগের পাশাপাশি অনেক রকম পোকামাকড় আক্রমণ হয়। চলুন জেনে নিন
যে কোন পোকা কলা গাছে আক্রমণ করে ক্ষতি করে এবং তার প্রতিকার-
১। উইভিল পোকাঃ এই পোকা কলার গাছের গোড়ায় সুরঙ্গ করে। এবং কলা গাছের
গোড়ায় কালো হয়ে পচে যায়। ফলে আক্রান্ত গাছগুলোর সহজে ভেঙে পড়ে। এই পোকা গুলো
গাছের গোড়ায় ডিম পাড়ে এবং পরে সার্কিট বা লার্ভা গাছ ছিদ্র করে মজ্জার মধ্যে
প্রবেশ করে। এই পোড়া গুলার আক্রমণ বছরে সব সময় হয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ আক্রান্ত গাছের কান্ড কেটে পোকা গুলো মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া
রাসায়নিক ওষুধ ক্লোরপিরিফোস ৪.০ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা
যেতে পারে।
২। কান্ড ছিদ্রকারী পোকাঃ এই পকাটি সারা বছরে দেখা যায়। মূলত এই পোকা কলা
গাছের কান্ড ছিদ্র করে এবং সেই স্থানে পচে যায় ও কলাগাছ মরে যায়।
প্রতিকারঃ দানাদার ঔষধ কার্বোফুরান ৩৫ গ্রাম গাছ প্রতি প্রয়োগ করা যেতে
পারে। এবং আক্রান্ত গাছগুলো তুলে পুড়িয়ে ফেলে দিতে হবে।
৩। কলার বিটল পোকাঃ এই পোকাটি আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আক্রমণের
সম্ভাবনা বেশি হয়। পূর্ণাঙ্গ পোকা গুলো কুরে কুরে কচি পাতা ও ফল খায়। যার ফলে
কলার পাতা বা ফলের উপরে কালো কালো দাগ হয়।
প্রতিকারঃ প্রথমত কলার ছড়া বের হলেই এন্ডোসালফান ১.৫ মিলি বা কার্বারিল
২.৫ গ্রাম বা কুইনালফস ২.০ মিলি প্রতি লিটার পানিতে স্প্রে করলে পকেট দমন করা
যায়।
কলা বাগানে সার দেওয়ার নিয়ম
কলা গাছের চারা লাগানো থেকে ফল নেওয়া পর্যন্ত যতটুকু সাল প্রয়োজন এবং যেভাবে
দেওয়া প্রয়োজন বা কোন সময় কতটুকু সার দেবেন সম্পূর্ণটাই এই নিম্নলিখিত বিষয়
থেকে জানতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফল গাছে সার প্রয়োগ
পদ্ধতি ১ঃ চারা লাগানোর পূর্বে
- ২.৫ ফিট গর্ত তৈরি
- প্রতি গর্তে ১০ কেজি গোবর
- ১৫০ গ্রাম TSP ( ফসফেট)
চারা লাগানোর ৭৫ দিন পর প্রতিটা গাছপতিঃ
- ১০০ গ্রাম TSP
- ১০০ গ্রাম ইউরিয়া
- ১০০ গ্রাম পটাশ
এবং এর সাথে অনু খাদ্য পরিমাণ মত দিয়ে দেবেন।
অনুখাদ্য তালিকাঃ
- জিংক সালফেট(প্রজিন) ১০গ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম সালফেট(ম্যাগমা) ১০গ্রাম
- সালফার(থিয়োভিট) ১০গ্রাম
- বোরণ দানাদার (বরোলাক্স) ৫গ্রাম
- জিপসাম ১০গ্রাম
- চারা লাগানোর ১৫০ দিন পর
- ইউরিয়া ১০০ গ্রাম
- পটপশ ১০০ গ্রাম
এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি কলা চাষে সঠিক পদ্ধতির সার প্রয়োগ করতে পারবেন। এর
নিয়মে আপনি যদি প্রতিটা গাছে সার প্রয়োগের মধ্যে দিতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার
গাছ অনেক তরতাজা হয়ে উঠবে এবং ভালো ফলন দিবে।
পদ্ধতি ২ঃ গর্ত তৈরীর সময়
- ১০ কেজি পচা গোবর
- ১৫০ গ্রাম টি এস পি
- ১০০ গ্রাম ইউরিয়া
- ১০০ গ্রাম পটাশ
- ১০ গ্রাম জিংক, সালফার, ম্যাগনেসিয়াম
- ৫ গ্রাম বরণ দানাদার
- ১০০ গ্রাম জিপসাম
চারা লাগানোর ৭৫ দিন পর
- ১০০ গ্রাম টি এস পি
- ১০০ গ্রাম ইউরিয়া
- ১০০ গ্রাম পটাশ
চারা লাগানোর ১৫০ দিন পর
- ৫০ গ্রাম ইউরিয়া
- ১০০ গ্রাম পটাশ
আপনি এই নিয়মে খুব সহজে কলা গাছের সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করার মাধ্যমে ভালো ফল
উপভোগ করতে পারবেন। প্রথম পদ্ধতি ভূপৃষ্ঠ থেকে রয়েছে এবং দ্বিতীয় পদ্ধতি আমার
ব্যবহার করা। আপনি চাইলে আমার মত করে সার ব্যবহার করতে পারেন বা প্রথম পদ্ধতির মত
ব্যবহার করতে পারেন। আর অবশ্যই বুঝতে সমস্যা হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় গ্রাহক আশা করি আজকে এই আর্টিকেল থেকে কিভাবে কলা গাছ সঠিক পদ্ধতিতে চাষ
করবেন এছাড়াও কলা গাছের রোগের প্রতিরোধ করবেন এমন নানা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে
গেছেন।
যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। আমাদের ওয়েবসাইট
ফলো করে রাখুন আর আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url