চেরি ফলের পুষ্টিগুণ - চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা

প্রিয় গ্রাহক আজকের এই আর্টিকেল থেকে চেরি ফলের পুষ্টিগুণ এবং চেরি ফল খাওয়ার উপকারী সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়াও চেরি ফল চেনার উপায়, চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম ও চেরি ফল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

চেরি ফল
পোস্ট সূচিপত্রঃ  

চেরি ফলের পুষ্টিগুণ

চেরি ফল ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ, এটি যে কোনও ডায়েটে একটি দুর্দান্ত সংযোজন করে তোলে। এখানে চেরিতে পাওয়া কিছু ভিটামিন রয়েছে-

ভিটামিন

পুরুষ

মহিলা

ভিটামিন সি

90 মিলিগ্রাম

75 মিলিগ্রাম

ভিটামিন

  15 মিলিগ্রাম

 

ভিটামিন বি 6

1.3 মিলিগ্রাম

 

ভিটামিন

15 মিক্রোগ্রাম

 

ভিটামিন কে

120 মিক্রোগ্রাম

90 মিক্রোগ্রাম

থায়ামিন

1.2 মিলিগ্রাম

1.1 মিলিগ্রাম

পটাসিয়াম

2,500 মিলিগ্রাম

 

পটাসিয়াম

2,500 মিলিগ্রাম

 

  • ভিটামিন সিঃ চেরি ফল ভিটামিন সি এর একটি চমৎকার উৎস, এক কাপ প্রস্তাবিত দৈনিক মূল্যের 27% প্রদান করে। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সাহায্য করে, যা কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং রোগের দিকে পরিচালিত করে।
  • ভিটামিন এঃ চেরি ফলও ভিটামিন এ-এর একটি ভালো উৎস, এক কাপ প্রস্তাবিত দৈনিক মূল্যের 10% প্রদান করে। ভিটামিন এ দৃষ্টি, ত্বকের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • ভিটামিন বি 6ঃ চেরি ফল ভিটামিন বি 6 এর একটি ভাল উত্স, এক কাপ প্রস্তাবিত দৈনিক মূল্যের 16% প্রদান করে। ভিটামিন বি 6 বিপাকের সাথে জড়িত এবং শরীরকে খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করতে সহায়তা করে।
  • ভিটামিন ইঃ চেরি ফল ভিটামিন ই এর একটি ভাল উৎস, এক কাপ প্রস্তাবিত দৈনিক মূল্যের 12% প্রদান করে। ভিটামিন ই একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন কে (Vitamin K)ঃ প্রতিদিনে প্রয়োজনীয় পরিমাণ: পুরুষ 120 মিক্রোগ্রাম, মহিলা 90 মিক্রোগ্রাম (স্বাস্থ্যকর প্রাণীর জন্য পরিমাণ)
  • থায়ামিন (Thiamine)ঃ প্রতিদিনে প্রয়োজনীয় পরিমাণ: পুরুষ 1.2 মিলিগ্রাম, মহিলা 1.1 মিলিগ্রাম (স্বাস্থ্যকর প্রাণীর জন্য পরিমাণ)
  • পটাসিয়ামঃ চেরি ফল পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস, এক কাপ প্রস্তাবিত দৈনিক মূল্যের 10% প্রদান করে। পটাসিয়াম একটি ইলেক্ট্রোলাইট যা শরীরে রক্তচাপ এবং তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  • ম্যাগনেসিয়ামঃ চেরি ফল ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভাল উৎস, এক কাপ প্রস্তাবিত দৈনিক মূল্যের 8% প্রদান করে। শক্তি উৎপাদন, পেশী সংকোচন এবং স্নায়ু সংক্রমণ সহ শরীরের অনেক প্রক্রিয়ায় ম্যাগনেসিয়াম জড়িত।
  • ক্যালসিয়ামঃ চেরি ফলও ক্যালসিয়ামের একটি ভাল উৎস, এক কাপ প্রস্তাবিত দৈনিক মূল্যের 6% প্রদান করে। শক্তিশালী হাড় এবং দাঁতের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য, এবং এটি পেশী সংকোচন এবং স্নায়ু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
চেরি ফল ভিটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ, যা যথাক্রমে দৃষ্টিশক্তি, ইমিউন সিস্টেম ফাংশন এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে পরিচিত। যদিও চেরি ফলের সঠিক স্বাস্থ্য উপকারিতা নির্ধারণের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন, স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অংশ হিসাবে চেরি খাওয়া আপনি এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনগুলি পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করার একটি ভাল উপায়।
খনিজ পরিমাণ প্রতি 100 গ্রাম খাদ্যে পাওয়া যায় নিম্নোক্ত খনিজের উপাদানগুলির জন্য-

খনিজ

100 গ্রাম খাদ্যে পাওয়া যায়

ক্যালসিয়াম

100-130 মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম

200-300 মিলিগ্রাম

ম্যাঙ্গানিজ

0.3-1 মিলিগ্রাম

সোডিয়াম

1,000 মিলিগ্রাম

লৌহ

1-5 মিলিগ্রাম

ফসফরাস

300-400 মিলিগ্রাম

জিংক

2-3 মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম

20-30 মিলিগ্রাম

  • ক্যালসিয়ামঃ প্রায় 100 গ্রাম খাদ্যে প্রাপ্ত ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রায় 100-130 মিলিগ্রাম থাকে।
  • লৌহঃ প্রায় 100 গ্রাম খাদ্যে প্রাপ্ত লৌহের পরিমাণ প্রায় 1-5 মিলিগ্রাম থাকতে পারে।
  • ম্যাগনেসিয়ামঃ প্রায় 100 গ্রাম খাদ্যে প্রাপ্ত ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ প্রায় 20-30 মিলিগ্রাম থাকে।
  • ম্যাঙ্গানিজঃ প্রায় 100 গ্রাম খাদ্যে প্রাপ্ত ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণ প্রায় 0.3-1 মিলিগ্রাম থাকে।
  • ফসফরাসঃ প্রায় 100 গ্রাম খাদ্যে প্রাপ্ত ফসফরাসের পরিমাণ প্রায় 300-400 মিলিগ্রাম থাকে।
  • পটাশিয়ামঃ প্রায় 100 গ্রাম খাদ্যে প্রাপ্ত পটাশিয়ামের পরিমাণ প্রায় 200-300 মিলিগ্রাম থাকে।
  • সোডিয়ামঃ প্রায় 100 গ্রাম খাদ্যে প্রাপ্ত সোডিয়ামের পরিমাণ প্রায় 1,000 মিলিগ্রাম থাকে।
  • জিংকঃ প্রায় 100 গ্রাম খাদ্যে প্রাপ্ত জিংকের পরিমাণ প্রায় 2-3 মিলিগ্রাম থাকে।
এই পরিমাণগুলি সাধারিত হতে পারে এবং খাদ্যের ধরণ, উৎপাদন পদ্ধতি, এবং অন্যান্য ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।

চেরি ফল চেনার উপায়

চেরি ফল চেনার উপায়
প্রাই মানুষ চেরি ফল এবং করমচারের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেনা। অনেক ব্যবসায় করমচাকে  বিভিন্ন মেডিসিন দিয়ে চেরি ফল বানিয়ে বিক্রি করে। এ সকল দুর্নীতি অনেক মানুষ ভোগান্তিতে পরে। চেরি ফল এবং করমচা এর মধ্যে পার্থ কিভাবে বুঝবেন জেনে নিন- 
  • প্রথমত চেরি ফল আপেলের মতো দেখতে হয়। এজন্য যেগুলো আপেলের মতো দেখতে সেগুলোই চেরি ফল এবং খেতে অনেক নরম।
  • করমচা হল লম্বা টাইপের মত হয়ে থাকে। এবং এগুলো খেতে ভেতরে শক্ত অনুভব হবে।

চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম

আপনি জানেন যে ফল সব সময় খাওয়া উচিত নয়। ফল খাওরও নির্দিষ্ট একটি সময়ে রয়েছে। চলুন চেরি ফল কখন খাবেন সেটা জেনে নিন-
চেরি ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো হবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। চেরি ফল সকাল বেলা খালি পেটে খেতে পারেন। এবং আপনি চাইলে আপনার খাবার টাইম এর সময় চেরি ফল খেতে পারেন। এক্ষেত্রে সে সময় খাবারের চাহিদা ও কমবে এবং শরীরের পুষ্টি ও পাবেন।

কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি যেন না খেয়ে ফেলেন। কারণ চেরিতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি তাই প্রয়োজনের থেকে বেশি খেলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। আর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চেরি ফল খাবেন।

চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা

চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা
চেরি ফল এমন একটি ফল যা স্বাদে যেমন সুস্বাদু এবং উপকারেও তেমন ভরপুর। চেরি ফল খেতে অনেক মিষ্টি এবং আমরা অনেকে এটি পছন্দ করি। চলুন কিছু চেরি ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-
  • অনিদ্রায় উপকারী
  • পেশি সুস্থ রাখতে
  • যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে
  • চুল বৃদ্ধি করে
  • হার্ট সুস্থ রাখে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  • হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে
  • রোগ প্রতিরোধে
  • ক্ষত সারাতে
  • ব্যথা দূর করে
  • স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
  1. অনিদ্রায় উপকারীঃ একটি গবেষণায় দেখা গেছে চেরির জুস খাওয়ার ফলে ঘুমের সময় এবং গুণমান বাড়তে সাহায্য করে। চেরি রসের মধ্যে আছে মেলাটোনি নামক একটি উপাদান যা ঘুমের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
  2. পেশি সুস্থ রাখতেঃ চেরি ফলে রয়েছে ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন উপাদান যা আপনার পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং আপনার পেশিকে সুস্থ রাখে।
  3. যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতেঃ চরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন যা শুক্রানু oxydotive সাইট থেকে রক্ষা করে এবং ফিউরি রেডিক্যাল মুক্ত করে যার ফলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাই।
  4. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতেঃ চেরিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ও কপার রয়েছে। চেরি ফলে এমন সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহের ইনসুলিন তৈরি করতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের দেহে ইনসুলিন অভাব দূর হয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ আছে।
  5. চুল বৃদ্ধি করেঃ চেরি ফল শুধু আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী তা নয়। চেরিতে এমন সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের চুলের পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।
  6. হার্ট সুস্থ রাখেঃ চেরি ফল হার্টের জন্য অনেক ভালো। চেরিতে রয়েছে অনেক পরিমাণে পটাশিয়াম, পলিফেনাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের হার্টের পর্দাকে হারাস করে হাটকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  7. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ চেরি ফলে ফাইবারযুক্ত উপাদান হয়েছে তার যারা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত চেরি ফল খেতে পারেন।
  8. হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতেঃ চেরিতে পেরেক রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য উপাদান যা আমাদের দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের জন্ম দেয়। যার ফলের হৃদরোগের মত সুন্দর রোগ থেকে বাঁচতে পারে।
  9. রোগ প্রতিরোধেঃ চেরিতে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। এজন্য শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত চেরি ফল খেতে হবে।
  10. ক্ষত সারাতেঃ  চেরি ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সেজন্য দেহের কোন অংশ কেটে গেলে বা কত হলে চেরি সেই ক্ষত সারাতে সক্ষম।
  11. ব্যথা দূর করেঃ চেরি ফল বাতের ব্যথা, মাথা ব্যথা ও মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  12. স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ যারা স্মৃতিশক্তি দুর্বলতায় ভুগছেন তাদের জন্য চেরি ফল অনেক উপকারী। এটি আল জাইমারের প্রকোপ কমায় এবং স্মৃতি শক্তি বাড়তে কাজ করে।

চেরি ফল খাওয়ার অপকারিতা

 
চেরি ফল খাওয়ার অপকারিতা
  • অতিরিক্ত মাত্রায় চেরি ফল খাবার ফলে বদ হজম, পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে। 
  • চেরি ফলের মধ্যে ফরুকুটস আছে এজন্য অতিরিক্ত মাত্রায় চেরি খাওয়ার ফলে রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত চেরি খাবার ফলে কোলেস্টেরলের সমস্যা হতে পারে
  • যাদের শরীরে এলার্জি আছে তাদের জন্য চেরি ফল খাওয়া বিপদজনক হতে পারে। American Academy of Asthma and Immunology বলেন- চেরিতে যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের গলা বন্ধ, শ্বাসকষ্ট ও আম্বাত হতে পারে। যদি এই সমস্যাগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি হয় তাহলে তাকে চরি ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

গ্রাহক আশা করি আজকের এই আটকে থেকে চেরি ফলের পুষ্টিগুণ, খাওয়ার নিয়ম, চেনার উপায় এবং উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জেনেছেন। এবং অবশ্যই মনে রাখবেন চেরি ফল বেশি খাবেন না ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।

আর অবশ্যই ওয়েবসাইট ফলো করে রাখবেন যেন পরের পোস্ট দেওয়ার সাথে সাথে আপনার কাছে নোটিফিকেশন যাই। আর অবশ্যই কোন কিছু বুঝতে না পারলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url