সুশাসন কী
আপনি কি জানেন সুশাসন কি? বা সুশাসনের মূল ভিত্তি কি? আজকে এই আর্টিকেল থেকে আমি
সুশাসন সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুব সহজে উপস্থাপন করেছি। সম্পূর্ণ
আর্টিকেল পড়ুন এবং উপভোগ করুন ধন্যবাদ।
সূচিপত্রঃ
সুশাসন কী
সুশাসন হল, সরকারের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, স্বাধীন বিচার বিভাগ, বৈধতা, বাক
স্বাধীনতা, কার্যকর সংসদ এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে শাসন কার্য পরিচালনা হলো
সুশাসন। এককথায় বলতে, নির্ভুল, দক্ষতা ও কার্যকরী শাসনকে সুশাসন বলে।
সুশাসন ধারণাটি বহুমাত্রিক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন রকম
ভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছে যেমন- ম্যাককরনী, হ্যালফ্যানি ও রড্রিগেজ বলেন,
রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের, সরকারের সাথে শাসিত জনগণের, শাসকের সাথে শাসিতের
সম্পর্ককে সুশাসন বলে।
আধুনিক সমাজের বুননে সুশাসন একটি মৌলিক ধারণা। এটি নীতি, প্রক্রিয়া এবং
প্রতিষ্ঠানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যার মাধ্যমে একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের কল্যাণ
প্রচার এবং বজায় রাখার জন্য কর্তৃত্ব প্রয়োগ করা হয়।
যদিও সঠিক সংজ্ঞা সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে
পরিবর্তিত হতে পারে, সুশাসনের অন্তর্নিহিত নীতিগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
সুশাসন বলতে কি বুঝায়
সুশাসন বলতে বোঝায় যে পদ্ধতিতে একটি দেশের সম্পদ এবং বিষয়গুলির পরিচালনায়
ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। এতে সরকারী কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ সংস্থা, বেসরকারি খাত
এবং নাগরিক সহ বিস্তৃত স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ জড়িত।
স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে, সুশাসন এমন
একটি পরিবেশ গড়ে তোলে যা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অগ্রগতিকে উৎসাহিত
করে।
সুশাসনের মূল ভিত্তি কি
সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য সুশাসন অপরিহার্য। এটি দক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ,
জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার ভিত্তি তৈরি করে, যাতে সরকার এবং প্রতিষ্ঠানগুলি
কার্যকরভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করে। সুশাসনের মূল ভিত্তি ঠিক কী?
সহজ ভাষায়, এটি নীতি এবং প্রক্রিয়াগুলির একটি সেটকে বোঝায় যা রাজনৈতিক,
সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সাধারণ ভালকে উন্নীত করার জন্য গাইড করে। এতে
ক্ষমতার ভারসাম্য, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্তর্ভুক্তি এবং নাগরিকদের
অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ জড়িত।
সুশাসন শুধু সরকারি খাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজ
সহ সকল স্তরের প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলিতে বিস্তৃত। এটি একটি গতিশীল ধারণা যা একটি
সমাজের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি করে ক্রমাগত বিকশিত হয়।
সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ কি
সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- (Good governance)। ইংরেজি ভাষায়, সুশাসনের
সমার্থক শব্দের মধ্যে রয়েছে কার্যকর শাসন, সুশাসন এবং দায়িত্বশীল শাসন, যার
সবকটিই ন্যায্যতা, অখণ্ডতা এবং সাধারণ ভালোর প্রচারের একই অন্তর্নিহিত নীতিগুলিকে
অন্তর্ভুক্ত করে।
সুশাসনের বৈশিষ্ট্য গুলো কি
সুশাসনের বৈশিষ্ট্য নিয়ে অনেক রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে। সুশাসনের
বৈশিষ্ট্যর ক্ষেত্রে অনেকেই অনেক রকম মত দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা বিভিন্ন
ব্যক্তি বিভিন্ন মত দিয়েছে যেমন-
UNDP মতে সুশাসনের ৯টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে-
- জনগণের অংশগ্রহণ
- আইনের শাসন
- স্বচ্ছতা
- সংবেদনশীলতা
- ঐক্যমত্য
- সাম্য
- কার্যকারিতা ও দক্ষতা
- জবাবদিহিতা
- কৌশলগত দক্ষতা
- স্বচ্ছতা
- দায়িত্বশীলতা
- জবাবদিহিতা
- জনগণের অংশগ্রহণ
- সংবেদনশীলতা
জাতিসংঘ সুশাসনের ৮টি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছে-
- জবাবদিহিতা
- কার্যকরী ও দক্ষ প্রশাসন
- স্বচ্ছতা
- ন্যায় বিচার
- আইনের শাসন
- জনগণের অংশগ্রহণ
- দায়বদ্ধতা
- মতামতের ওপর নির্ভরশীলতা
IDA মতে সুশাসনের বৈশিষ্ট্য ৪টি যথা-
- দায়িত্বশীলতা
- স্বচ্ছতা
- আইনি কাঠামো
- অংশগ্রহণ
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য কথা বলেছে, এই সকল বৈশিষ্ট্যর
মধ্যে সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব। চলুন জেনে নেয়া
যাক সে কোন ৯টি বৈশিষ্ট্য যে বৈশিষ্ট্য গুলো সুশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়।
- স্বচ্ছতাঃ সরকারের সকল নিয়ম-কানুন/নিতেমালা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের স্পষ্ট, পরিষ্কার বা স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া কেই বুঝায়, যা দ্বারা একাধিক অর্থ বা ব্যাখ্যা করার সুযোগ না থাকে।
- জবাবদিহিতাঃ যখন কোন ব্যক্তি তার কাজের জন্য কারো কাছে কৈফিয়ত দেয়, কিংবা সে কাজটি কিভাবে করেছে তার ব্যাখ্যা দেয় অথবা কাজটি করার পেছনে কারণ কি তা প্রদর্শন করতে বাধ্য থাকে তাকে জবাব দিতে বলে।
- অংশগ্রহণঃ সকল জনগণের মধ্যে শাসন সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ এবং তা বাস্তবতার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বন্টন করাকে জনগণের অংশগ্রহণ বলে।
- সংবিধানশীলতাঃ সরকার যখন জনগণের দাবি-দাওয়া ও আসা-- আকাঙ্ক্ষা পূরণের যথাসময়ে সারা প্রদান করতে বা যুক্তিসঙ্গত সময়সীমার মধ্যে পরিসেবা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত থাকবে তখন একে সংবেদনশীলতা বলে।
- আইনের শাসনঃ এ ভি ডািইসি আইনের শাসনের তিনটি বৈশিষ্ট্য কথা বলেছে, (১) আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, (২) সকলেরই আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ, (৩) গুনানি ব্যতীত কারো বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা।
- স্বাধীন বিচারভাগঃ শাসন ও আইন বিভাগের সম্পূর্ণ হস্তক্ষেপ মুক্ত থেকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে, ভয়-ভীতি বা প্রলোভনে কাছে মাথা নত না করে, সততা ও দক্ষতার সাথে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পাড়াকে বিচার বিভাগ স্বাধীনতা বলে।
- বৈধতাঃ সরকারকে জনগণের ভোটে বা সমর্থনে গঠিত হতে হবে। সামরিক, অগণতান্ত্রিক, ও অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে সুশাসন প্রতিষ্ঠান করে একদিন অসম্ভব অর্থাৎ বৈধতা সুশাসনে অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।
- দক্ষতাঃ সুশাসনের বস্তুগত, মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই, যথাপযুক্ত ব্যবহার এবং পরিবেশ সুরক্ষাকে বোঝায়। অর্থাৎ প্রাপ্ত সম্পদ ও উপকরণের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা অর্জন করাকে দক্ষতা বলে।
- বেকেন্দ্রীকরণঃ এর অর্থ হলো ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও দায়িত্ববোধকে প্রশাসনের উচ্চস্তর থেকে নিম্ন স্তরে সরিয়ে দেওয়া।
এখানে সুশাসনের ৯টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো
বাদেও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন-গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জনমতের প্রাধান্য,
ঐতমত্ত, জনপ্রশাসনের সেবা ধর্মীয় মনোভাব, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ইত্যাদি।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় গ্রাহক আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি সুশাসন কি তা সম্পর্কে জানতে
পেরেছেন। এই আর্টিকেল থেকে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে
আপনার মতামত জানাবেন।
আজকের বিষয়বলি থেকে যদি কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয়ে থাকে বা আপনার কোন প্রশ্ন
থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না। আমাদের সাথে থাকার
জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url