সঠিক নিয়মে শিম চাষ পদ্ধতি - শিমের ফলন বৃদ্ধির উপায়

প্রিয় গ্রাম থেকে সঠিক নিয়মে শিম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং শিমের মাটি তৈরি থেকে শুরু করে বীজ বপন এবং কিভাবে সিমে উচ্চ ফলন বৃদ্ধি করবেন সকল তথ্য জানতে পারবেন আর্টিকেল থেকে।
শিম
সূচিপত্রঃ  

সঠিক নিয়মে শিম চাষ পদ্ধতি

মাত্র 40 থেকে 50 দিনের মধ্যে আগামী জাতের শিম চাষ পদ্ধতি জেনে নিন।
শিম চাষের জন্য সঠিক উপায় মাটি তৈরি করে নিন। আর সঠিকভাবে বীজ বপন করুন। আর আপনাকে মনে রাখতে হবে বীজ বপণের এক সপ্তাহ পূর্বে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। জেনে নিন কিভাবে সঠিক উপায়ে মাটি তৈরি করে নিবেন-
আরো পড়ুনঃ 
শিম এর বীজ রোপনের আগে আপনাকে অবশ্যই ভালোভাবে মাদার তৈরি করে নিতে হবে। মাদার তৈরি করার পরে, মাদারের মধ্যে যে স্যারগুলো দেবেন সেগুলো হল-
  • ১০০ গ্রাম টিএসপি
  • ৫০ গ্রাম এমওপি
  • ২০ গ্রাম জিপসাম
  • ৫ থেকে ১০ কেজি গোবর সার
  • এছাড়াও আপনি চাইলে অন্যান্য সার অল্প পরিমাণ দিতে পারেন
আর অবশ্যই মাটিগুলো ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এভাবে খুব সহজে শিম বীজ রোপনের সঠিক উপায় মাটি তৈরি করে নিতে পারেন।

এ সময় যে শিম চাষ করবেনঃ 
  • বারি শিম ১
  • বারি শিম ২
  • বিইউ শিম ৩
  • ইপসা শিম
  • রুপবান অটো শিম
শিমের বীজের চারা অঙ্কুরোদগম পদ্ধতিঃ
মাদার তৈরি হওয়ার সময়টাতে আপনি খুব সহজ উপায়ে অঙ্কুরোদগম কিভাবে করবেন শিখে নিন-

উপাদানঃ পানি, পেঁয়াজের খোসা, চা পাতি। আর উপাদানের মধ্যে রয়েছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে
প্রথমে আপনি একটি পাত্র নিন- 
  • এরপরে পাত্রের মধ্যে ১০০ মিলে পরিমাণে পানি দিন
  • এবার পাত্রটির মধ্যে ৪ থেকে ৫ টা পেঁয়াজের খোসা দিন
  • এভাবে ৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন
  • ৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর, সে পাত্র থেকে পানি গুলো থেকে অন্য পাত্রে রাখুন
  • এবার সেই পানির মধ্যে এক চা চামচ চা পাত দিয়ে দিন
  • এ সকল উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে ফেলুন
  • এবার সিমের বীজগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এখানে মনে রাখবেন শিমের বীজ বাপনের আগে ২ থেকে ৩ ঘন্টা রোদে শুকিয়ে নিবেন
  • পানিতে ভিজানোর পরে এবার সুতি কাপুর বা টিস্যু পেপার নিন। আপনি চাইলে যে কোন কাপড় নিতে পারেন
  • এবার সিমের বীজগুলো পানি থেকে তুলে এই কাপড়ের মধ্যে ১২ ঘন্টা জড়িয়ে রেখে দিন
  • ১২ ঘন্টা পর দেখবেন সব কয়টা বীজের মধ্যে শিকড় হয়ে গেছে
আপনার শিমের বীজ অঙ্কুরোদগম করা হয়ে গেছে। এই নিয়মে খুব সহজেই আপনি শিমের বীজ অঙ্কুরোদগম করতে পারবেন।
বীজ বপনের পরিমাণঃ
  • শতকের জন্য ৪০ গ্রাম বীজ
  • হেক্টরের জন্য ১০ কেজি
  • এখন প্রতি ৪ কেজি
  • এবং এ সকল জমি থেকে মাদার উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার হবে
শিম চাষের উপযুক্ত সময়ঃ মধ্য জুলাই মাস থেকে শুরু করে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত এবং আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস উপযুক্ত সময়

শিমের বীজ রোপনঃ
  • প্রথমে আপনাকে প্রত্যেকটা মাদারে এর থেকে দেড় ইঞ্চি গর্ত করে নিন
  • শিম বীজের সাদা অংশটা নিচের দিকে রেখে মাটি গর্তে দিয়ে দিন। আর অবশ্যই একটি মাদারে চারটি করে বীজ দিবেন
  • এবার আশেপাশে মাটি দিয়ে ঢেকে দিন
  • এবার বীজ বপন শেষে যে দ্রবনটি তৈরি করেছেন ওই দ্রবনটি মাদারে দিন
এভাবে খুব সহজেই বীজ বপন করতে পারবেন এবং খুব কম সময়ে মাত্র চার দিনের চারা গজিয়ে নিতে পারবেন। এবং যারা বাণিজ্যিক পর্যায়ের শিম চাষ করতে আগ্রহী এবং প্রচুর পরিমাণে লাভবান হতে চান।

তাহলে এই পদ্ধতি গুলো মেনে শিম চাষ করতে পারেন। এবার ৩ মিটার দূর দূর মাদার গুলা তৈরি করুন এবং সারিতে মাদার তৈরি করলে ১.৫ মিটার দূর দূর বীজ বপন করবেন

শিমের ফলন বৃদ্ধির উপায়

সার প্রয়োগঃ আপনি সঠিক উপায় এবং সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করে, আপনার সিমের গাছের ফলন বেশি করতে পারবেন। আর এখানে আমি একটি মাদারের ক্ষেত্রে বোঝাবো এবং প্রতিটা মাদারের ক্ষেত্রে একই নিয়মে সার দিতে পারবেন, চলুন জেনে নিন কিভাবে সার প্রয়োগ করবেন-
  • প্রথমে আপনার শিম গাছের গোড়ার মাটিগুলো আলগা করে দেন
  • এবং শিম গাছের গোরার চার দিকে রাউন্ড করে সামান্য মাটি তুলে নিন
  • এবার এক চা চামচ গ্রামের মত পটাশার দিন
  • টিএসপি এক চা চামচ গ্রাম দিয়ে দেন
  • ইউরিয়াসার হাপ চা চামচগ্রাম দিয়ে দিন
  • এবার এক চা চামচ থিওভিট পাউডার চারদিকে ছিটিয়ে দিন
  • এবার আপনি মাটিগুলো দিয়ে সারগুলোকে ঢেকে দিন
  • এবার বিশুদ্ধ পানি দিয়ে গাছের গোড়াতে চারদিকে ভিজিয়ে দিন
এবং প্রতি ২০ দিন পর পর এভাবে শিম গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ করতে পারেন।এভাবে খুব সহজে শিম গাছে সার প্রয়োগ করে উচ্চমানের ফলন পাবেন।
সারের উপকারী দিকঃ
  • পটাশ সারঃ শিম গাছে পটাশ সার দিলে প্রচুর পরিমাণে ফুল আসে এবং সেই ফুলের গড়া শক্ত করে বিধায় ফুল ঝরে পড়ে যায় না।
  • টিএসপি সারঃ টিএসপি সার দিলে গাছের গোড়া অনেক শক্তিশালী হয় সেই সাথে গাছকে অনেক সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে।
  • ইউরিয়া সারঃ ইউরিয়া সার গাছে দিলে গাছের বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয় এবং গাছের পাতা সবুজ হয়ে যায়। আর ইউরিয়া সার গাছে বেশি ব্যবহার করলে গাছ মারা যেতে পারে। এজন্য অল্প পরিমাণে ইউরেশিয়ার ব্যবহার করবেন
  • থিওভিট পাউডারঃ থিওভিট সালফারযুক্ত ছত্রাক নাশক, এটি গাছের গোড়ার মাটিতে দিলে মাটির মধ্যে অবস্থানরত যত ছত্রাক রয়েছে সেগুলো মেরে ফেলে
  • স্প্রে ব্যবহার
শিমের গাছে প্রচুর ফুল ও ফলের জন্য মাইক্রোটাচ ব্যবহার করতে পারেন। এই মাইক্রোটাচ ন্যাপথাইল এসিটিক অ্যাসিড, এটি ব্যবহার করলে ফুল ও ফলে সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। মাইক্রোটাচ প্রতি ৫ লিটারে ১ মিলি পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন। এবং এর সাথে চাইলে ফার্টি হরমোন, ফ্লোরা বা ফোরা স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।

শিম গাছের রোগ ও প্রতিকার

রোগঃ শিম গাছে মূলত ৪ ধরনের সমস্যা আমরা দেখতে পাই যেমন-
  • শিমের বোটা ও ছোট ফুলের বোটাতে ছত্রাকে আক্রমণ
  • শিম গাছের পাতায় ও সিমে এ্যান্থ্রাকনোজ দেখা যায়
  • শিম গাছের পাতায় সাদা পাউডারের মতো বস্তু দেখা যায়
  • এছাড়াও শিমে বা শিমের পাতাতে হলুদ ছোপ ছোপ দেখা যায়
প্রতিকারঃ শিম গাছের ৪টি রোগের প্রতিকার আমরা জেনে নেন-
  • ফুল ও ফলের বোটাই ছত্রাকে আক্রমঃ এক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন স্প্রে করতে পারেন যেমন- Amister, Mirador, Noyaku। এ সকালে ওষুধের ডোজ ১ থেকে ১.৫ এম এল প্রতি লিটার। এই ওষুধটি স্প্রে করবেন দুই সপ্তাহ পর পর।
  • এ্যান্থ্রাকনোজঃ শিম গাছের এটি একটি মারাত্মক রোগ। শিম ও তার পাতার ওপরে কালো বাদামী অথবা হলুদ রঙের স্পোর্ট দেখা যায়। শিমের বোটাতে হলে শিম ঝরে যায়। আপনার শিম গাছের এ্যান্থ্রাকনোজ স্প্রে করতে পারেন- Satsuma, Mancofil, Ndofil। এই ওষুধের ডোজ প্রতি লিটারে ২.৫ গ্রাম।
  • পাওডারি মিলডিউঃ এটি শিম গাছের সাদা পাউডার দেখে এই রোগটি চেনা যায়। এ রোগের ফলে গাছের খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফলন মারাত্মক কমে যায়। এই রোগ হলে যে স্প্রে করবেন- এ রোগ হলে টেবকোনা জল যেমন- Shamir, Jatayu, কপার অক্সি ক্লোরাইড যেমন- Blitox ব্যবহার করতে পারেন।
  • ডাওনি মিলডিউঃ এটি শিম গাছের একটি ভয়ঙ্কর রোগ। পাতায় ও শিমে হলুদ ছোপ ছোপ এবং শিম খাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হয়। Dimethomorph ব্যবহার করে ডাওনি মিলডিউ নিরাময় সম্ভব।Dimethomorph এর ডোজ হল প্রতি লিটারে ১ থেকে ১.৫ গ্রাম
এবং আপনাকে মনে রাখতে হবে প্রতিটা জিনিস ব্যবহার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করেই ব্যবহার করবেন। কারন বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন সময় ওষুধ চেঞ্জ করে ব্যবহার করতে পারেন এর জন্য বিশেষজ্ঞ মতবাদ নিয়ে ব্যবহার করবেন।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় গ্রাহক আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে শিম গাছ কিভাবে চাষ করবেন, শিম গাছের কিভাবে ফলন বৃদ্ধি করবেন, ইত্যাদি সকল শিমের সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন। যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখুন এবং আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে বা কোন কিছু না বুঝতে পারেন অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url