শাবান মাসের ফজিলত - শাবান মাসের দোয়া

ফজিলত পূর্ণ নফল রোজার মাস হলো শাবান মাস। শাবান মাসের ফজিলত এবং শাবান মাসের দোয়া সম্পর্কে না জানলে অবশ্যই এই আর্টিকেল আপনার জন্য। নবীজির যে দোয়া গুলো পাঠ করতেন সেই দোয়া নিম্নলিখিত দেওয়া হল।
শাবান মাসের ফজিলত - শাবান মাসের দোয়া
পোস্ট সূচিপত্রঃ প্রিয় গ্রাহক আজকের এ আর্টিকেল থেকে আপনি বিশেষ করে জানতে পারবেন নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শাবান মাসে কোন দোয়া গুলো পড়তেন। এছাড়াও শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

শাবান মাসের ফজিলত

শাবান মাসে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বেশি বেশি করে নফল রোজা করতেন। এই মাসে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রোজাটাই কেন রাখলেন? অন্য যেকোন নফল আমল করতে পারতেন। এর হেকমত আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। তিনটি ধাপে আপনি জানতে পারবেন-
প্রথমঃ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা এবং ওলামায়েকগণ এক দুইটা বিশেষ কারণ ও রহস্য এবং হিকমত উল্লেখ করেছেন সেটা হলো- আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে আমাদেরকে ৩০ টি রোজা ফরজ করেছেন।

‘‘যদি আমরা রমজানের আগে নফল রোজা রাখি, তাহলে রমজানের রোজা রাখার টা অনেক সহজ হয়ে যাবে।”

অনেকের অনেক দিন থেকে রোজা না থাকার কারণে, হঠাৎ রমাজান মাসে রোজা করতে পারে না এবং বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য রমজানের আগ থেকে রোজা রাখা প্র্যাকটিস থাকলে রমাজানে রোজা রাখাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হয়তো এই কারণে আগে থেকে রোজা রাখতেন।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সুন্নত নামাজ আছে, আবার কোন কোন নামাজের পরেও সুন্নত আছে। এই সুন্নতের কারণ এটাও যে ফরজ নামাজের মধ্যে যদি কোন ঘাটতি থাকে তাহলে, নফল বা সুন্নত নামাজ দিয়ে আল্লাহতালা তার ঘাটতি পূরণ করে দেবে।

আর সুন্নত নামাজের প্র্যাকটিসের মাধ্যমে ফরজ নামাজ যেন সুন্দরভাবে হয়, এজন্য আল্লাহতালা এই ব্যবস্থা রেখেছেন। ‘ঠিক একই ভাবে রমজানের ত্রিশটি ফরজ রোজা রাখার আগে সাবানের নফল রোজা রাখার অভ্যাস করা এবং শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা’যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সামনে এবং পিছনে সুন্নত নামাজ রয়েছে তেমনভাবে রমজানের আগে সুন্নত নামাজ আছে এবং পরেও সুন্নত নামাজ আছে।

দ্বিতীয়ঃ শাবান মাসে অবশ্যই বেশি বেশি করে রোজা রাখবেন। তবে শাবান মাসের শেষের দিকে রোজা রাখবেন না কারণ-আপনি যদি সাবান মাসে একটানা রোজা রাখেন তাহলে রমজান এবং গায়ের রমজান মাসের পার্থক্য হবে না। এর জন্য শাবান মাসের শেষের দিকে রোজা রাখবেন না। ‘‘নবীজির শেষে দিকে রোজা রাখতেন না।”

আর অবশ্যই আপনি চন্দ্র মাসের ১৩-১৪-১৫ এই তিন দিন রোজা রাখবেন। প্রায় প্রতিটা পরিবারে ব্ল্যাক ম্যাজিক দ্বারা আক্রান্ত। বিভিন্ন অসুখ দেখা দেয় কিন্তু কোন অসুখের নাম এবং অসুখের চিকিৎসা পাওয়া যায় না। এগুলো ব্ল্যাক ম্যাজিক এর কারণে হয়ে থাকে।

“এজন্য এই চন্দ্র মাসের তিনটি রোজা করলে, আল্লাহ তাআলা আপনার সকল রোগ থেকে এবং সকল প্রকার ব্ল্যাক ম্যাজিক থেকে রক্ষা করবে।”

তৃতীয়ঃ “আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) সারা বছর তার ভাংতি রোজা রাখার সময় পেতেন না। বিভিন্ন কারণে রোজা করতে পারতেন না। আর শাবান মাসে নবীজি নফল নামাজগুলো রাখতে এবং সে ফাঁকে ফাঁকে মা আয়েশা (রাঃ) তার ফরজ নামাজগুলো রাখতেন।”

তাহলে এই বিষয় থেকে বোঝা যায়, যদি কোন কিছুর কারণে রোজা ভাংতি হয়ে যায়। যদি কোন অসুস্থতার কারণে, বা মহিলাদের মাসিকের কারণে, বিভিন্ন সফরের কারণে ইত্যাদি তাহলে শাবান মাসের মধ্যে ভাংতি রোজা গুলো রেখে দেওয়া উচিত।

মূল্যবান তথ্যঃ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এই শাবান মাসের রোজা রাখার কেমন প্রস্তুতি নিতেন আসন এই সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা যাক।

‘‘আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রমজান মাসে যেমন প্রস্তুতি নিতেন, তেমনভাবে শাবান মাসেও উপস্থিতি নিতেন।”

জান্নাতের সাহাবী হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত- প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কাছে সবচেয়ে উত্তম রোজার বিষয় জানতে চাওয়া হলে, নবীজী এরশাদ করে বলেন- “রমজানের সম্মানার্থে শাবানের রোজা।”

একবার জান্নাতের সাহাবী হযরত উসামা ইবনে যায়িদ (রাঃ) আরচ করলেন, “ইয়া রাসুল আল্লাহ (সাঃ) আমি দেখেছি আপনি শাবানের রোজা যেভাবে, গুরুত্ব সহকারে রাখেন, অন্য কোন মাসে এত গুরুত্ব দিয়ে রাখেন না।”

এর উত্তরের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করে বললেন,“রজব ও রমজান মাসের মাঝখানে এই শাবান মাস, মানুষ এই মাসের প্রতি খুব উদাসীন। এতে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে উপস্থাপন করা হয়। আর আমি এটা পছন্দ করি যে, আমার আমল এমন অবস্থায় তোলা হোক আমি যেন তখন রোজা অবস্থায় থাকি।”

প্রিয় নবী (সাঃ) অনেক পছন্দ রোজা ছিল শাবান মাসের রোজা। যেমন হযরত আল্লামা শাহ ফাজলে রাসুল বাদাউনি রাহমাতুল্লাহি তিনি বলেন, “যিনি শাবান মাসের রোজা এই উদ্দেশ্যে রাখলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর পছন্দ ছিল, তবে ওই ব্যক্তির জন্য প্রিয় নবী (সাঃ) এর শাফাত নসিব হবে।”

শাবান মাসের দোয়া

শাবান মাসে নবীজির যে দোয়া বেশি বেশি করে পড়তেন সেগুলো শিখে নিন এবং বেশি বেশি করে পড়ার চেষ্টা করুন। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) শাবান মাসের বেশি নফল রোজা রাখতেন। শাবান মাসের তুলনায় অন্য কোন মাসে এত নফল রোজা রাখতেন না। শাবান মাসের রাতগুলোতে নবীজি বেশি বেশি করে ইবাদত করতেন।
শাবান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। রমজান মাসের পরিপূর্ণ ফসলের আহরণে রজব মাসের পর শাবান মাসের গুরুত্ব অন্যতম। এ সম্পর্কে হযরত আবু বকর বালখি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

“রজব হলো বীজ রোপনের মাস। আর সাবান হল ওই বীজের সেচ দেওয়ার মাস।” অতঃপর রমজান হল বীজ রোপন ও সেচ দেওয়ার পর পরিপূর্ণ ফসল উঠানোর মাস। বরকতময় মাস রমজান পেতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে বেশি বেশি একাধিক দোয়া করতেন। সে দোয়াগুলো হলো-

১। উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাবান ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য শাবান মাস কে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। অর্থাৎ রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করুন।’

২। উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাদান ওয়া আইন্না আলা সিয়ামিহি ওয়া ক্বিয়ামিহি।’

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন এবং রমজানে (দিনের বেলায়) রোজা পালন এবং (রাত জেগে) নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন।’

প্রিয় গ্রাহক এখন আপনাদের এবং আমাদের কর্তব্য হলো এই দোয়া বেশি বেশি করে আমল করা। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্দেশ্য ছিল, আল্লাহতায়ালা যেন এই দোয়ার ওসিলায় যেন অফুরন্ত কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করেন।

লেখকের মন্তব্য

শাবান মাস একটি বরকত ময় মাস। এই মাসে বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়তে নবীজি। আশা করি, শাবান মাসের ফজিলত এবং সাবান মাসে নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কোন দোয়া পড়তেন এ বিষয়গুলো আপনি জানতে পেরেছেন।

বিভিন্ন তথ্য জানতে অবশ্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখুন। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

A2Z ফিউচারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url