বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় - যাকাতের খাতগুলো কি কি
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় গ্রাহক আপনি কি জানেন, বর্তমানে কত
টাকা থাকলে
যাকাত ফরজ হয়? এ ছাড়া যাকাতের খাত গুলো কি কি? ইসলামের যাকাতের নির্দিষ্ট বিধান
রয়েছে। এই সকল বিধান মেনেই আপনার যাকাত ফরজ হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষের একটি
জিনিসের সমস্যা হয়ে থাকে সেটা হলো- স্বর্ণ নাকি রুপা। অনেক ওলামায়েগণদের মতে
স্বর্ণ অনুযায়ী যাকাত দেওয়া ফরজ। আবার অনেকে বলে থাকে রুপা অনুযায়ী যাকাত
দিলেও হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক স্বর্ণ নাকি রুপা দিয়ে যাকাত দেওয়া আপনার জন্য
উচিত।
ভূমিকা
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়? যাকাত ফরজ হওয়ার পাঁচটি শর্ত রয়েছে।
কিছু সম্পদ থাকলে যে তার জন্য যাকাত ফরজ হবে এমন কিন্তু নয়। যাকাত ফরজ হওয়ার
কিছু নিয়ম বা শর্ত রয়েছে যেগুলো মানলেই আপনার জন্য যাকাত ফরজ হবে। অনেকেই
রয়েছে যে যাকাত সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। ইসলামে জাকাত সম্পর্কে কি বলছে এটা
আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে। এই আর্টিকেল আমি খুব সহজে চাকার সম্পর্কিত সকল তথ্য
সম্পর্কে আলোচনা করেছে। বিশেষ করে জানতে পারবেন- কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
রমাদান মাস আসার পর থেকে আমাদের মাথায় একটি প্রশ্ন ঘুরে, বর্তমানে কত টাকা থাকলে
যাকাত ফরজ হয়। মহানবী (সাঃ) সময়কালে টাকা ছিল না, তখন ছিল স্বর্ণ এবং রুপা। এই
দুইটা দিয়ে মূলত যাকাত দেওয়া হত। চলুন জেনে নেওয়া যাক স্বর্ণ এবং রুপার
ক্ষেত্রে বর্তমান কত টাকা দিলে যাকাত ফরজ হয়।
আরো পড়ুনঃ সেকেন্ডে সেকেন্ডে লক্ষ কোটি নেকি
যদি স্বর্ণ হিসেবে ধরি তাহলে, সাড়ে তিন লক্ষ টাকা যদি থাকে তাহলে তার নিসাব
পরিমান সম্পদের মালিক বলে ধারণা করা হবে। আর যদি রুপার ক্ষেত্রে ধরি তাহলে, ৫০
হাজারের মতো টাকা থাকলে তার জন্য যাকাত ফরজ হবে। এক্ষেত্রে আপনি কি করবেন
স্বর্ণের হিসেবে যাকাত দেবেন না রুপার হিসেবে যাকাত দিবেন? এক্ষেত্রে ইসলামিক
বিশেষজ্ঞদের মতে দুই রকম মত রয়েছে স্বর্ণ এবং রুপা।
- স্বর্ণঃ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর সময় স্বর্ণ এবং রুপা দিয়ে যাকাতের নিসাব নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর তখন এই স্বর্ণ এবং রুপার দুইটার মূল্য সমান ছিল। অর্থাৎ সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণের বিনিময়ে সাড়ে ৫২ তলা রুপা পাওয়া যেত। আবার সাড়ে ৫২ তলা রুপা বিক্রি করলে, সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ পাওয়া যেত। পরবর্তীতে দেখা গেছে সিলভার কেউ ব্যবহার করতেছে না। আর স্বর্ণ সকলে ব্যবহার করতেছে ফলে, সিলভারের দাম কমতে লাগলো কিন্তু স্বর্ণের দাম কমে নি। ফলে, রাসূল (সাঃ) যে মান নির্ধারণ করে দিয়েছিল সেই মান বজায় থাকে স্বর্ণের মধ্যে, সিলভারের মধ্যে নয়।
- রুপাঃ রুপার নিসাব যদি ধরা হয়ে থাকে, তাহলে এমন মানুষদের যাকাত দিতে হবে যারা ধনী না। কারণ এখন 50 হাজার টাকা একজন খুদে ব্যবসায় যেমন ঝাল মুড়ি আলাদের কাছেও থাকে। এছাড়াও যারা রিকশাচালক এদের কাছেও হিসাব করলে দেখা যাবে ৫০০০০ এর উপরে টাকা রয়েছে। এছাড়াও যারা টিউশনি করে তাদের একাউন্টে দেখলে ৫০০০০ টাকা থাকতে পারে। আর ৫০০০০ টাকা থাকলে সাধারণ আমরা কখনোই তাদেরকে ধনী বলি না।
ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের মতে যেহেতু স্বর্ণর মান কমলেও কিছুটা কমে আবার বেড়ে যায় সে
ক্ষেত্রে স্বর্ণ যাকাতের জন্য ঠিক আছে। আর রুপার দাম অনেক কমে গেছে এবং যদি আরো
ভবিষ্যতে কমে যায় ফলে রুপার যে মান এক সময় ছোট বাচ্চাদের কাছে টাকার পরিমাণ
থাকবে।
আরো পড়ুনঃ ৫ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে জানুন
আর হাদিসে রয়েছে, ধনী ব্যক্তিদেরকে যাকাত দেওয়া ফরজ। যেহেতু রুপার মান অনুযায়ী
একজন গরীব মানুষ যারা ঠিকমতো খেতে পারে না তাদের কাছেও দেখলে পঞ্চাশ হাজার টাকা
থাকবে। সে ক্ষেত্রে তো তাদেরকে ধনী বলতে পারে না। এজন্য স্বর্ণের দামে যাকাত
দেওয়া হল ফরজ কারণ ধনী ব্যক্তি স্বর্ণের দামে যাকাত দিতে।
যাকাতের খাতগুলো কি কি
যাকাতের খাতগুলো কি কি? যাকাতের খাতগুলো সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা সূরা তওবা ৬০
নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট ভাবে যাকাতের আটটি খাতের কথা বলেছেন।
إِنَّمَا الصَّدَقْتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسْكِينِ وَ الْعَمِلِينَ عَلَيْهَا
وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَرِمِينَ وَ فِي سَبِيْلِ
اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ
حَكِيمٌ
উচ্চারণঃ ইন্নামাসসাদাকা-তু লিলফুকারা-ই ওয়ালা মাছা-কীনি ওয়াল 'আ-মিলীনা
'আলাইহা-ওয়াল মুআল্লাফাতি কু'লুবুহুম ওয়া ফিব্রিকা-বি ওয়াল গা-রিমীনা ওয়া ফী
ছাবীলিল্লা-হি ওয়াবনিছ ছাবীলি ফারীদাতাম্ মিনাল্লা-হি; ওয়াল্লা-হু 'আলীমুন হাকীম।
অর্থঃ নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত
কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়)
দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের
মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
- ফকির
- মিসকিন অর্থাৎ, যার অল্প পুঁজি রয়েছে এবং তার ভালো দিন চলে। একান্ত মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে তার কষ্ট হয় অথবা যাদের কিছুই নাই।
- যাকাত কালেকশনে যারা থাকবেন। তাদেরকে ইসলামী রাষ্ট্র বেতন হিসেবে যাকাত দিতে পারবেন।
- অমুসলিম যাদেরকে ইসলামের পথে আকৃষ্ট করা প্রয়োজন। তাদের মাধ্যমে মুসলিম উপকৃত হবে তাদের ইসলামের জন্য সিমপেথি প্রয়োজন তাদেরকে যাকাত দেওয়া যেতে পারে। অথবা যাদেরকে যাকাত দিলে ইসলামের পথে আসবে।
- ক্রীতদাস বাসী মুক্ত করার জন্য যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে।
- যারা ঋণগ্রস্ত তাদের ঋণ পরিশোধ করার জন্য যাকাত দেওয়া যাবে
- জিহাদের যারা লিপ্ত তাদেরকে টাকা যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে।
- মুসাফির বা পথিক যাদের সামর্থ্য নেই পর্যটন পরিমাণে টাকা পয়সা খরচ করা তাদের কে যাকাত দেওয়া যাবে।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি? যাকাত ফরজ হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে। সামান্য কিছু
সম্পদ হলে যে তার জন্য যাকাত ফরজ হবে সেটা কিন্তু নয়। যাকাত দেওয়ার ইসলামিক যে
প্রক্রিয়া রয়েছে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি আপনি যান তাহলে, আপনার যাকাত ফরজ
হবে। যাকাত ফরজ হওয়ার মোট পাঁচটি শর্ত রয়েছে।
- নিসাব- নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে এই নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে আপনার ওপর যাকাত ফরজ। এই পরিমাণ কম হলে আপনার জন্য যাকাত ফরজ হবে না।
- হালাল ইন হাওর- এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া। অর্থাৎ, এক বছর আপনার কাছে ওই নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা।
- আলমালিকিইয়া- সম্পদ টি নিজের হতে হবে।
- আজিআরও- আপনার প্রয়োজনীয় সব কিছু অতিরিক্ত হওয়া।
- আদামতদুউন- আপনার খুব বেশি পরিমাণে ঋণ না থাকা।
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ? ৬ ধরনের সম্পদের উপরে মূলত যাকাত ফরজ হয়। অনেকেই
কিন্তু জানিনা, যে যাকাত মূলত কোন কোন সম্পদের জন্য ফরজ। চলুন জেনে নেওয়া যাক
কোন কোন সম্পদের কারণে যাকাত ফরজ হয়।
- স্বর্ণঃ স্বর্ণের উপরে যাকাত ফরজ হয়। স্বর্ণ হতে পারে আপনার ব্যবহারের বা সে স্বর্ণ হোক আপনার ঘরে গচ্ছিত রাখার জন্য যেটাই হোক না কেন, স্বর্ণ যদি আপনার কাছে থাকে এই স্বর্ণ যদি সাড়ে ৭ ভরি হয় তাহলে কিন্তু অবশ্যই যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাত যে হারে প্রদান করবেন- শতকরা ২.৫%, ৪০ টাকায় ১ টাকা। অর্থাৎ আপনার কাছে যদি এক লক্ষ টাকা সমপরিমাণ যাকাতের মাল থাকে তাহলে আপনাকে ২.৫ হাজার টাকা দান করতে হবে।
- রুপাঃ রুপা যদি কোন ব্যক্তির কাছে থাকে তাহলে সাড়ে ৫২ ভরি।
- নগদ টাকাঃ যদি নগদ টাকা হয় তাহলে নগদ টাকার মধ্যে যাকাত রয়েছে। নগদ টাকা যদি ব্যাংকে থাকে বা হাতে থাকে যেখানে থাকুক না কেন এটার মধ্যে যাকাত রয়েছে। আর এই টাকার পরিমান তখন হবে নেসাবের উপরে।
- ব্যবসায়িক পণ্যঃ ব্যবসায়িক যত পণ্য রয়েছে, যেগুলো বিক্রি করা হয় বা তার সাথে আরও যেগুলো ব্যবসা রয়েছে, এ সকল পণ্যগুলোর ও যাকাত রয়েছে।
- গবাদি পশুঃ গবাদি পশু যাকাত দেওয়া লাগে, কিন্তু আমাদের এদিকে গবাদি পশুর জায়গা তেমনভাবে দেওয়া হয় না। গবাদি পশুর শর্ত হল সাইমা হতে হয়, অর্থাৎ বিচরণশীল প্রাণী হতে হয়, প্রাণীগুলো একা একাই খাবার খায় মালিকের তেমন টাকা খরচ করতে হয় না এদের ক্ষেত্রে যাকাত দিতে হবে।
- ফসলঃ আসলে যাকাত এটা হল ফরজ বিধান। এ ফরজ বিধানটা আমাদের সমাজে তেমন পালন করা হয় না। যাকাতের যে ফসলের দিতা এটা আবার অনেকেই জানে না। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, হে ঈমানদারগণ আমি আল্লাহ তোমাদেরকে যেই উপার্জন করার তৌফিক দিয়েছে, তোমার যে হালাল উপার্জন করো সেখান থেকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করো। সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আল্লাহ তোমাদেরকে জমিন থেকে যে ফসল ফলানি গুলো উৎপন্ন করাইয়া দেই ওই ফসল থেকেও তোমরা যাকাত প্রদান কর।
কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়
কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়? যাকাত দিতে হলে মূলত যে পাঁচটি নেসাব
রয়েছে, এই নেসাব গুলো থাকলে মূলত আপনি যাকাত দিতে পারবেন। এখন নেসাব পরিমাণ
স্বর্ণ যদি হয়ে থাকে, তাহলে আপনার যদি শুধু স্বর্ণ আসে তাহলে ৮৫ গ্রাম মানে
সাড়ে সাত ভরি যেটাকে বলা হয়। আর এই সাড়ে সাত ভরি বা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ আপনার
কাছে এক বছর থাকলে আপনি যাকাত দিতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া
আর যদি স্বর্ণের সাথে অন্য কোন নগদ টাকা থাকে বা রুপা এছাড়া ব্যবসার মাল থাকে সে
ক্ষেত্রে সবগুলো যে মূল্য রয়েছে সে মূল্যের উপর আপনার যাকাত আবশ্যক হবে।
এক্ষেত্রে রুপার নেসাবের সাথে মেলানো হবে। সকল মূল্য একত্র করার পর ৫৯৫ গ্রাম
রুপা কেনার মত সামর্থ্য থাকলে আপনার যাকাত হয়ে যাবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় গ্রাহক আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন, যাকাত
দেওয়া কাদের জন্য ফরজ। শুধু সম্পত্তি থাকলে তার জন্য যাকাত ফরজ নয় বরঞ্চ
ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী তাদের জন্য যাকাত ফরজ যারা বড়লোক হয়ে থাকে।
আমাদের এই ওয়েবসাইটে আপনার নতুন হয়ে থাকলে অবশ্যই ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখুন।
ইসলামিক আরও তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে
অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার এই আর্টিকেলটি পড়ে আমি উপকৃত হলাম। আশা করি আপনার এই ওয়েবসাইটে এরকম সুন্দর সুন্দর কন্টেন্ট আমাদের উপহার দিবেন ধন্যবাদ।